যে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিজেপির মূল লড়াই, এবার কি সেই পরিবারতন্ত্রের ফসলকেই দিল্লির মসনদে বসাতে চলেছে গেরুয়া শিবির? জল্পনা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। হবে না-ই বা কেন? দিল্লির তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তারই ঘরের মাঠে হারিয়ে দিয়েছেন প্রবেশ সিং বর্মা। যা সাম্প্রতিক অতীতে ভারতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় অঘটন।
নয়াদিল্লি আসন থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ৪,০৪৯ ভোটে হারিয়েছেন প্রবেশ। ওই কেন্দ্রের আর এক হেভিওয়েট প্রার্থী কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিত ওই কেন্দ্র থেকে মাত্র হাজার চারেক ভোটই পেয়েছেন। দুই হেভিওয়েটকে মাটি ধরানো এই প্রবেশ আসলে কে?
প্রবেশ একেবারেই রাজনীতিতে আনকোরা নন। বরং রাজনীতিটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। দিল্লিরই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সাবেক বিজেপি সহ-সভাপতি সাহিব সিং বর্মার ছেলে প্রবেশ। উত্তর ভারতের প্রভাবশালী জাঠ সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় মুখ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন সাহিব সিং বর্মা। উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার সেই লিগ্যাসি পেয়েছেন প্রবেশ। তার চাচা আজাদ সিংও বিজেপির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। উত্তর দিল্লি পুরনিগমের মেয়র ছিলেন আজাদ সিং। প্রবেশের নিজের রাজনৈতিক সাফল্যও কম নয়। ২০১৩ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে মেহরাউলি আসন থেকে সাংসদ হন প্রবেশ। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালেই পশ্চিম দিল্লি লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন। ২০১৯ সালেও ওই কেন্দ্র থেকে ৫.৭৮ লাখ ভোটে জিতেছেন প্রবেশ।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে একপ্রকার অপ্রত্যাশিতভাবেই প্রবেশকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। সেটার নেপথ্যে অবশ্য একাধিক বিতর্ক জড়িয়ে রয়েছে। এই প্রবেশ বর্মাই সিএএ- এনআরসি আন্দোলনের সময় এক ঘণ্টায় মুসলমান অধ্যুসিত শাহিনবাগ ‘খালি’ করার হুঁশিয়ারি দেন। এমনকী প্রবেশকে এও বলতে শোনা যায়, ‘শাহিনবাগের আন্দোলনকারীরা হিন্দুদের জন্য বিপদের কারণ। বাড়িতে ঢুকে ধর্ষণ করে যাবে।’ একের পর এক মুসলমান বিরোধী বিতর্কিত মন্তব্যের জন্যই প্রবেশকে লোকসভায় টিকিট না দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ফোকাস করার নির্দেশ দেয় বিজেপি। তখন থেকেই কেজরিওয়ালের আসন নয়াদিল্লিতে নজর দেন প্রবেশ। শেষে জায়ান্ট কিলিং।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কেজরিকে হারানো জায়ান্ট কিলারই কী তাহলে এবার দিল্লির মসনদে? প্রবেশ দিল্লি বিজেপির প্রথম সারির নেতা। ভোটে জিতেছেন কেজরিকে হারিয়ে। জাঠদের মধ্যে তার প্রভাব বিরাট। তাছাড়া দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে কারও নাম বিজেপির তরফে আগে থেকে ঘোষণা করা না হলেও প্রবেশের অনুগামীরা তাকেই হবু মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রচার করেছেন। ফলে মনে করা হচ্ছে প্রবেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। যদিও তার বিপক্ষে একটা ফ্যাক্টর রয়েছে। সেটা হল তার পরিবারতান্ত্রিক পরিচয়। প্রবেশ ছাড়া বাঁশুরি স্বরাজ, স্মৃতি ইরানিদের মতো নামও শোনা যাচ্ছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসজেড