ঢাকা | বঙ্গাব্দ

একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাহিত্য জগতের সবচেয়ে বড় আয়োজন।

এ মেলার সূচনা হয় ১৯৭২ সালে, তবে এর শেকড় প্রোথিত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গভীরে।
  • | ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাহিত্য জগতের সবচেয়ে বড় আয়োজন। একুশে বইমেলা

এ মেলার সূচনা হয় ১৯৭২ সালে, তবে এর শেকড় প্রোথিত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গভীরে। বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে এই বইমেলা আজ এক অনন্য ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।


১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বাঙালির জাতীয় চেতনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৬৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে সাহিত্যচর্চা এবং ভাষা সংরক্ষণে এর ভূমিকা দৃশ্যমান হতে থাকে। তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চিত্তরঞ্জন সাহা একক উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কিছু বই সাজিয়ে বসেন, যা একুশে বইমেলার সূচনা বলে গণ্য করা হয়। ধীরে ধীরে এটি একটি প্রতিষ্ঠিত মেলায় রূপ নেয় এবং ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজন শুরু করে।


১৯৮৪ সালে বইমেলাটি "অমর একুশে গ্রন্থমেলা" নামে সরকারি স্বীকৃতি পায় এবং নিয়মিত আয়োজনের কাঠামো পায়। সময়ের সঙ্গে মেলার ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে, দর্শনার্থী ও প্রকাশকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯৯০-এর দশকে এটি দেশের সবচেয়ে বড় সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়। শুরুতে কেবল বাংলা একাডেমি চত্বরে সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০১৪ সাল থেকে এর পরিসর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়।


একুশে বইমেলা কেবল বই কেনাবেচার জায়গা নয়, এটি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার এক বিশাল মিলনমেলা। প্রতিদিন কবিতা পাঠ, সাহিত্য আলোচনা, মোড়ক উন্মোচন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে মেলা মুখরিত থাকে। লেখক-পাঠকদের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়, যা নতুন লেখকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মেলায় প্রকাশিত হয় অসংখ্য নতুন বই, যা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে।


প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলা এই মেলা জাতীয় চেতনার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে এটি বইপ্রেমী মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। বইমেলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বাংলাভাষার প্রতি আগ্রহী হয় এবং বাংলা সাহিত্যকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগেও এই মেলার আবেদন অমলিন, কারণ এটি বইপ্রেমীদের আবেগ, ভালোবাসা এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অন্যতম প্রতীক।