টঙ্গীর তুরাগ তীরে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে গত ৫ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে আগামীকাল (১৪ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার। এই পর্বে দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলবী অনুসারীরা অংশগ্রহণ করবেন। দ্বিতীয় পর্বের প্রথম রাত পবিত্র শবেবরাতের রাত হওয়ায়, মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে শবেবরাত পালনের মাধ্যমে অধিক সওয়াব হাসিলের লক্ষ্যে জড়ো হচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে বয়ান।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ময়দানের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টঙ্গী তুরাগ নদের তীরের বিশাল ইজতেমা ময়দানে দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ময়দান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রথম পর্বের মুসল্লিরা যে উচ্ছিষ্ট ফেলে গিয়েছিলেন, সেগুলি পরিষ্কার করা হয়েছে, এবং ময়দান ও সামিয়ানার নিচে মাটি ও আবর্জনা ঝেড়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বাথরুম, ওজু-গোসল এবং রান্নার স্থানসহ অন্যান্য জায়গাগুলি ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে, এবং ছিঁড়ে যাওয়া বা খসে পড়া চটগুলি নতুন করে বাঁধা ও সাজানো হয়েছে।
এটি একটি বিশাল ধর্মীয় আয়োজন, যা মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা ও একতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।
পুরো ময়দানকে ৮৫ খিত্তায় সাজানো হয়েছে। এসব কাজগুলো ময়দান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও জামাতবন্দী মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে করেছেন। ময়দানের যেসব জায়গায় সামিয়ানা টানানো হয়নি সেসব জায়গার সামিয়ান সংশ্লিষ্ট খিত্তার মুসল্লিরা নিয়ে আসবেন।
জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে ইজতেমা ময়দানমুখো মুসল্লিদের আগমন। ট্রেন, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে, পায়ে হেঁটে, নৌ পথে ও আকাশ পথে (বিদেশি মেহমান) ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে সমবেত হচ্ছেন।
ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির সমাগমকে কেন্দ্র করে টঙ্গী, উত্তরা, তুরাগ, কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভাসমান দোকানপাট ও হোটেল-রেস্তোরাঁ। আজ বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান শুরু হবে। আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় দেশি-বিদেশি মাওলানা ও বুজুর্গ মুরুব্বিরা বিভিন্ন ভাষায় পর্যায়ক্রমে মূল্যবান বয়ান করবেন। রবিবারের আখেরি মোনাজাতে ২০/২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে ধারণা করছেন আয়োজকরা।
এদিকে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা যেভাবে পরিচালিত হয়েছে একইভাবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমাও পরিচালিত হবে বলে ইজতেমা পরিচালনা কমিটিসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ডেসকো, ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- র্যাব, পুলিশ, সিটিএসবিসহ বিভিন্ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। ইজতেমা চলাকালীন ট্রাফিক ও যাতায়াত ব্যবস্থা আগের মতোই থাকবে বলেও জানা গেছে।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী এলাকার মুসল্লি মো. বেলাল বলেন, ‘শবে বরাতের মধ্যেই ইজতেমা শুরু। তাই আগেই ময়দানে আসলাম। বেশি আমল করে যেন বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারি।’
মাওলানা সা’দ অনুসারী মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম জানান, আগামীকাল শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত নিজামউদ্দিন মারকাজের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, "ইজতেমার প্রথম রাতে পবিত্র শবেবরাত হওয়ায়, লাখ লাখ মুসল্লি সহ আমরা ইজতেমা ময়দানে পবিত্র শবেবরাত পালন করব। তাই কাল রাতের মধ্যেই মুসল্লিদের আগমনে ময়দান ভরে যাবে ইনশাল্লাহ।"
এছাড়া, তিনি আরও জানান যে, ইজতেমার প্রস্তুতি কাজ প্রায় শেষ হয়েছে এবং শুক্রবার আমবয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্বের শতাধিক দেশের হাজার হাজার বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা জুবায়ের আহমদ পন্থীদের আয়োজনে প্রথম পর্বের ইজতেমা দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় পর্বটি শুরু হবে আগামীকাল শুক্রবার এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।
thebgbd.com/NIT