শবে বরাত সম্পর্কে ইসলামি স্কলার ও আলেমদের মধ্যে ভিন্ন মত দেখা যায়। কিছু আলেম একে ফজিলতপূর্ণ রাত হিসেবে স্বীকার করেন এবং ইবাদতের প্রতি উৎসাহ দেন, আবার কিছু আলেম শবে বরাতের বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
নিচে উভয় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো—
যারা শবে বরাতকে ফজিলতপূর্ণ বলে মনে করেন: অনেক প্রসিদ্ধ ইসলামি স্কলার ও ফকিহ শবে বরাতকে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ রাত বলে মনে করেন। তাদের ব্যাখ্যা হলো:
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস ও আহলে সালাফের বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং এ রাতের ফজিলতকে অস্বীকার করা উচিত নয়। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৩/১৩১)
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, শবে বরাতের রাতটি অত্যন্ত বরকতময় এবং এটি ইবাদত-বন্দেগির রাত। মুসলমানদের উচিত এই রাতে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা। (আল-মাজমু, ৫/৪৫)
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, আমার মতে, শাবান মাসের ১৫তম রাত (শবে বরাত) ফজিলতপূর্ণ। এ রাতে দোয়া কবুল হয় ও রহমত বর্ষিত হয়।
হানাফি মাজহাবের ফকিহগণ বলেন, শবে বরাতের রাতে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার, নফল নামাজ ও রোযা রাখা মুস্তাহাব (উত্তম)।
যারা শবে বরাতকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ বলে মনে করেন না
কিছু ইসলামি স্কলার মনে করেন, শবে বরাতের ফজিলতের বিষয়ে হাদিসগুলো দুর্বল (জয়িফ) বা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের ব্যাখ্যা হলো:
ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, শবে বরাতের রাত সম্পর্কে সহিহ কোনো হাদিস নেই, যা থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে এটি বিশেষ কোনো ফজিলতের রাত।
(তাফসির ইবনে কাসির, সূরা দুখান)
শায়খ ইবনে উথাইমিন (রহ.) বলেন, শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ কোনো ইবাদত করা বিদআত। রাসুল (সা.) বা সাহাবারা এই রাতে বিশেষ আমল করেননি।
শায়খ আলবানী (রহ.) বলেন, শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কিত বেশিরভাগ হাদিস জয়িফ (দুর্বল) বা মওজু (জাল)। সুতরাং এ রাতের বিশেষত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না।
মধ্যমপন্থা: কী করা উচিত?
যারা শবে বরাতের ফজিলতকে স্বীকার করেন, তারা ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করতে পারেন, তবে এটিকে বাধ্যতামূলক মনে করা উচিত নয়।
এই রাতে কোনো বিশেষ ইবাদত নির্দিষ্ট করে পালন করা বা একে ধর্মীয় আচার বানানো ঠিক নয়।
যেহেতু কিছু হাদিসে এর ফজিলতের ইঙ্গিত আছে, তাই দোয়া, ইস্তিগফার ও নফল নামাজ পড়া উত্তম।
শবে বরাত উপলক্ষে আতশবাজি, মোমবাতি জ্বালানো, কবরস্থানকে উৎসবস্থলে পরিণত করা এবং বিশেষ খাবার খাওয়াকে ইবাদতের অংশ মনে করা বিদআত।
সুতরাং, শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি বা অবহেলা—দুটোই পরিহার করা উচিত। যারা ইবাদত করতে চান, তারা করতে পারেন, তবে এটিকে অপরিহার্য বা ধর্মীয় রীতি মনে করা যাবে না।
thebgbd.com/NA