ঢাকা | বঙ্গাব্দ

নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে

দলটির গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন শেষে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করা হতে পারে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) ও জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক)-এর উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের নাম চূড়ান্ত হতে চলেছে এই সপ্তাহেই। দলটির গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন শেষে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করা হতে পারে। একইসঙ্গে নতুন একটি ছাত্র সংগঠনের ঘোষণাও আসতে পারে, যেখানে প্রাথমিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।


বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে তিনি যদি এই দলের সঙ্গে যুক্ত হন, তাহলে সরকারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, “ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা চলছে। এতে যুক্ত হলে সরকারে থাকা সম্ভব নয়। তাই আমি যদি এই দলে যোগ দেই, তাহলে পদত্যাগ করব।”


নতুন দলের সদস্যসচিব হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।


দলের গঠনতন্ত্র ও নীতিমালা চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে

দলের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র এবং আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট কমিটি ও নীতিনির্ধারণী ফোরাম কাজ করছে। নতুন এই রাজনৈতিক সংগঠনে বৈছাআ এবং জানাক-এর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা যুক্ত থাকবেন। একইসঙ্গে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকজন নারী সংগঠককে রাখা হতে পারে।


দলের নাম, নীতিমালা এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা জানতে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ নামে একটি জনমত সংগ্রহ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হবে, যেখানে ইতিমধ্যে তিন লাখের বেশি মানুষ মতামত দিয়েছেন।


নতুন রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনা

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, নতুন দলটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো ও কর্মপদ্ধতি বিশ্লেষণ করছে। একইসঙ্গে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অনুশীলন ও চর্চাগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যা দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হবে।


তিনি আরও বলেন, “আমরা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করব এবং দ্রুতই রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করব। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত করা, যাতে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।”


ব্যতিক্রমধর্মী আত্মপ্রকাশ ও রাজনৈতিক কৌশল

দলটি সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে ব্যতিক্রমী কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লং মার্চ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই লং মার্চের মাধ্যমেই দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।


নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সামান্তা শারমিন বলেন, “আমাদের সংগঠন সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে। তবে আমরা চাই, নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ বা রক্তপাত এড়ানো হোক। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত হলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, যেখানে সাধারণ জনগণ ভয় ও বাধাহীনভাবে ভোট দিতে পারবে।”


নতুন রাজনৈতিক দল কবে, কীভাবে এবং কতটা শক্তিশালীভাবে আত্মপ্রকাশ করবে, সেটিই এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।


thebgbd.com/NIT