ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পোপের অবস্থা ‘স্থিতিশীল’

পোপ ফ্রান্সিস ২০১৩ সাল থেকে ক্যাথলিক চার্চের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
পোপের অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ পোপ ফ্রান্সিস

স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে পোপ ফ্রান্সিস শান্তিপূর্ণভাবে হাসপাতালে তার নবম রাত পার করেছেন। ৮৮ বছর বয়সী পোপ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন এবং এখনও নাকে নল দিয়ে অক্সিজেন নিচ্ছেন। ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।


শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভ্যাটিকান পোপের অবস্থা ‘সংকটজনক’ এবং তার দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট ও প্লাটিলেট কাউন্ট কম হওয়ায় তাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে বলে জানায়। পোপের সুস্থতা কামনায় অনেকেই জেমেলি হাসপাতালের বাইরে মোমবাতি, ফুল ও তার ছবি রেখেছেন।


ভ্যাটিকানের সকালের আপডেটে বলা হয়েছে, পোপ রাতে ভালোভাবে বিশ্রাম নিয়েছেন এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে তিনি এখনও ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন নিচ্ছেন। পোপ ফ্রান্সিস তার সাপ্তাহিক অ্যাঞ্জেলাস প্রার্থনার পরিবর্তে একটি বার্তা প্রকাশ করেছেন। বার্তায় তিনি চিকিৎসা কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি এবং থেরাপির অংশ হিসেবে বিশ্রাম নিচ্ছি।’ তিনি বিশ্ববাসীর কাছে তার জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধও করেছেন।


এর আগে শনিবার বিবৃতিতে ভ্যাটিকানসিটি জানায়, পোপ ফ্রান্সিস ‘দীর্ঘদিন ধরে হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। শুক্রবারের চেয়ে অবস্থা আরো অবনতি হয়েছে। মহান ধর্মগুরুর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তিনি শঙ্কা মুক্ত নন।’ ভ্যাটিকান জানায়, পোপ তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে এখনো সচেতন এবং সারাদিন একটি চেয়ারে বসে কাটিয়েছেন। যদিও তার শারীরিক অবস্থা গতকালের চেয়েও খারাপ। অতিরিক্ত অক্সিজেনের পাশাপাশি পোপের রক্তসঞ্চালনেরও প্রয়োজন। পরীক্ষায় দেখা গেছে তার প্লাটিলেটেও কমে গেছে।


হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে বেশ কয়েক দিন ধরে ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ ছিল পোপের। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি ভ্যাটিকান এক বিবৃততে জানায়, পোপ ফ্রান্সিসকে ‘জটিল শারীরিক অবস্থার’ কারণে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যত দিন প্রয়োজন, তত দিন হাসপাতালে থাকবেন তিনি। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, পোপের শ্বাসনালীতে একাধিক জীবাণু সংক্রমণ হওয়ায় তার চিকিৎসায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।ভ্যাটিকান আরো জানায়, স্থিতিশীল অবস্থায় পোপের ‘নির্ধারিত চিকিৎসা চলছে’ আর তার শরীরে জ্বর নেই। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতি ভ্যাটিকান জানায়, পোপের স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এই মুহূর্তে তার জ্বর নেই।


পোপ ফ্রান্সিস ২০১৩ সাল থেকে ক্যাথলিক চার্চের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ব্রঙ্কাইটিসের কারণে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও তিনি আধ্যাত্মিক দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন। হাসপাতালের বাইরে নান, পুরোহিত ও সাধারণ মানুষ পোপের সুস্থতা কামনায় প্রার্থনা করছেন। ইতালির শিক্ষক ইল্ডে জিতো বলেন, ‘পোপ আমাদের সবার জন্য বিশেষ ব্যক্তি, তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।’


পোপ ফ্রান্সিসের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তিনি আগেই বলেছেন, এখনও পদত্যাগ করার সময় আসেনি, তবে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। পোপের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রার্থনা করছেন।


এদিকে পোপের সম্ভাব্য পদত্যাগ সম্পর্কে কথা বলেছেন কার্ডিনাল জ্যঁ মার্ক অ্যাভেলিন ও কার্ডিনাল হুয়ান যোসে ওমেলাও। কার্ডিনাল ওমেলা গির্জার ধারাবাহিকতার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, ‘পোপ বদলায়, আমরা বিশপরা বদলাই, প্যারিসের পুরোহিতরা বদলায়, সবাই বদলায়। কিন্তু ট্রেনটি চলতেই থাকে।’ পোপের পদত্যাগ করার সম্ভাবনা সম্পর্কে কার্ডিনাল অ্যাভেলিন বলেন, ‘পোপ যদি পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে ওঠেন তবে ‘সবকিছুই সম্ভব।’


২০১৩ সালে আকস্মিকভাবেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন পোপ ফ্রান্সিসের পূর্বসূরী পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট। যা ১২৯৪ সালের পর কোনো পোপের পদত্যাগের প্রথম কোনো ঘটনা। সেই সময়ে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। সংশিষ্টরা বলছেন, তার (পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের) শারীরিক অবস্থা সম্ভবত পোপ ফ্রান্সিসের মতো গুরুতর ছিল না। তবে পোপ ফ্রান্সিস সম্প্রতি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, যদি স্বাস্থ্যগত সমস্যা যথেষ্ট গুরুতর হয়ে ওঠে তবে তিনি পদত্যাগ করার কথা বিবেচনা করবেন। 


সূত্র: এএফপি


এসজেড