ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জেলেনস্কির পাশে ইউরোপ

ইউরোপের একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইবেন না।
  • অনলাইন ডেস্ক | ০১ মার্চ, ২০২৫
জেলেনস্কির পাশে ইউরোপ জেলেনস্কি ও ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করা সম্ভব, হোয়াইট হাউস থেকে আক্ষরিক অর্থেই বিতারিত হওয়ার পর এমনটাই জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে ট্রাম্পের কাছে তিনি ক্ষমা চাইতে নারাজ। শুক্রবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না, নিজের আচরণের জন্য দুঃখপ্রকাশ করবেন কি না। জেলেনস্কি সাফ ‘না’ বলে দিয়েছেন। 


তবে ওভাল অফিসে যা হয়েছে, তা যে দুই দেশের সম্পর্কের পক্ষে ভাল নয়, মেনে নিয়েছেন জেলেনস্কি। তার কথায়, ‘এই ধরনের বাদানুবাদ উভয় পক্ষের জন্যই খারাপ। ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে সাহায্য না করেন, তবে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানো আমাদের পক্ষে মুশকিল হবে। তবে নিশ্চিত, এই সম্পর্ক মেরামত করা সম্ভব। কারণ, এটা শুধু দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে সম্পর্কের বিষয় নয়। এটা দুই দেশের মধ্যেকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক। সব সময় আমাদের দেশের মানুষের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’


শুক্রবার (স্থানীয় সময়) ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি। একটি খনিজ চুক্তির বিষয়ে তাদের কথাবার্তা হয়। ওই চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল জেলেনস্কির। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা ক্রমে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে পরিণত হয়। ট্রাম্প প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। তিনি সমঝোতার পথে হাঁটতে চাইছেন না। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের জন্যও জেলেনস্কিকেই দায়ী করেছেন ট্রাম্প। জেলেনস্কিও অনড় মনোভাব নিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বৈঠকে ছিলেন। ভান্সের সঙ্গেও তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। শেষে বাতিল হয়ে যায় চুক্তি। জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে আসেন।


হোয়াইট হাউসে পোশাক নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে জেলেনস্কিকে। এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কেন স্যুট পরেননি? যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দপ্তরে এসেছেন স্যুট না পরে?’’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে খানিক ব্যঙ্গ করেই তিনি বলেন, ‘আপনার আদৌ স্যুট আছে তো?’ জেলেনস্কি তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ শেষ হলে নিশ্চয়ই স্যুট পরব। হয়তো আপনার মতো, হয়তো তার চেয়েও ভাল কিছু।’ এর আগে জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করার সময়েও স্যুট পরেননি জেলেনস্কি।


এই বৈঠকের পর ইউরোপের একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা মুখ খুলেছেন। তারা জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের যে সমস্ত দেশের বন্ধুত্ব রয়েছে, মূলত তারাই জ়েলেনস্কিকে সমর্থন করেছেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এই দেশগুলো কিছুটা আতঙ্কিত। তাদের ধারণা, জেলেনস্কিকে চাপে রেখে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকেই জয়ী ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে ট্রাম্পের। হোয়াইট হাউসে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বাদানুবাদের পর একযোগে তাই ইউরোপের রাষ্ট্রনেতারা মুখ খুলেছেন।


ইউক্রেন শান্তি চায়: জার্মানি


ট্রাম্প-জেলেনস্কি বাক্যযুদ্ধের পর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলৎস বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষ শান্তি চান। শান্তি কত জরুরি, তা ওদের চেয়ে বেশি কেউ জানেন না। সেই কারণেই আমরা সকলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির দাবি করে আসছি। জার্মানি এবং ইউরোপের উপর ভরসা রাখতে পারে ইউক্রেন।’


রাশিয়াই আগ্রাসী, লড়ছে ইউক্রেন: ফ্রান্স


ফান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ পর্তুগালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়া আগ্রাসী, ইউক্রেনের মানুষ সেই আগ্রাসনের শিকার। আমরা তিন বছর আগেও ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এবং রাশিয়ার উপর বিধিনিষেধ চাপাতে সম্মত হয়েছি। এখনও তা-ই করতে চাই। আমরা বলতে যুক্তরাষ্ট্র, সমগ্র ইউরোপ, জাপান, কানাডা সকলের কথাই বলছি। ইউক্রেন নিজের সম্মানের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য এই যুদ্ধ করছে।’


ভেদাভেদ নয়, একজোট হতে হবে: ইতালি


ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ‘পশ্চিমি শক্তির মধ্যে যে কোনও ভেদাভেদ আমাদের আরও দুর্বল করে তোলে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের মধ্যে অবিলম্বে আলোচনা প্রয়োজন। আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ, কী ভাবে তার মোকাবিলা সম্ভব, তা নিয়ে কথা বলা দরকার। ইউক্রেনের মাধ্যমে আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছে। কয়েক বছর আমরা ভাল ভাবেই সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছি। আগামী দিনে ইতালি তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সামনে এই আলোচনার প্রস্তাবই রাখতে চায়।’


প্রকাশ্যে ঝামেলা! জিতছে ক্রেমলিন: ডেনমার্ক


ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেন, ‘ইউক্রেনের পেটে তো ঘুষি মারা হল! বন্ধুদের মধ্যে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে হবে। কিন্তু সেটা এ ভাবে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে হলে একজনই জিতে যান। আর তিনি ক্রেমলিনে বসে আছেন।’


ইউক্রেন, ভয় পেয়ো না: ইউরোপীয় কমিশন


ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষের সাহসকে সম্মান জানাই। কঠোর হোন, সাহসী হোন, ভয় পাবেন না। প্রেসিডেন্ট, আপনি একা নন। আমরা শান্তির জন্য আপনার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।’


ইউক্রেনের পাশে আছি: মলডোভা


মলডোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া স্যান্ডু বলেন, ‘সত্যিটা খুব সহজ। রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে। রাশিয়াই এখানে আগ্রাসী। ইউক্রেন নিজেদের স্বাধীনতার জন্য লড়ছে। আমরা সকলে ইউক্রেনের পাশে আছি।’


পাশে আছি: স্পেন


স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইউক্রেন, স্পেন তোমার পাশে আছে।’


আগ্রাসনের ইতি চাই: নেদারল্যান্ডস


নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস ইউক্রেনকেই সমর্থন করে। আমরা স্থায়ী শান্তি চাই। যে আগ্রাসন রাশিয়া শুরু করেছে, ইউক্রেনের মানুষের জন্য, ইউরোপের মানুষের জন্য আমরা সেই আগ্রাসনের ইতি চাই।’


ইউক্রেন একা নয়: পোল্যান্ড


পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাক্স সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি, ইউক্রেনের বন্ধুগণ, আপনারা একা নন।’


ইউক্রেনের পাশে আছি: চেক প্রজাতন্ত্র


চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পিটার প্যাভেল লিখেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সময় এসেছে, ইউরোপের কিছু করে দেখানো উচিত।’


সূত্র: স্কাই নিউজ, এপি