রাজধানীবাসীর কাছে ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতারি প্রথম পছন্দ। এখানকার হরেক রকমের মুখরোচক খাবার অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বিশেষ করে, ‘বড় বাপের পোলা’, সুতি কাবাব, মুখরোচক বিরিয়ানি, শাহী হালিম ও জিলাপির জন্য এই বাজারের খ্যাতি দীর্ঘদিনের। এবারও ইফতার বাজারে এসব খাবার বিক্রি করতে ব্যস্ত বিক্রেতারা, আর প্রথম দিনেই জমজমাট পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে।
আজ রোববার (২ মার্চ) এবারের রমজানের প্রথম দিনে বিকেল চারটার দিকে চকবাজারে দেখা যায়, বিভিন্ন রকমের ইফতারি পসরা সাজানো রয়েছে। বিক্রেতারা হাঁকডাক দিয়ে খাবার বিক্রি করছেন, কেউ ব্যস্ত প্যাকেট করতে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতারা পছন্দের খাবার কিনছেন।
কবুতরের রোস্ট বিক্রি করছেন মোস্তফা কামাল। তিনি জানান, মুরগির রোস্ট ৩০০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিনের ভিড় ভালোই, অনেকেই কিনছেন, আবার অনেকে কেবল ভিডিও করতে এসেছেন।
চকবাজারের জনপ্রিয় খাবার "বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়"— নামক বিশেষ মুড়িভর্তা ও অন্যান্য পদ মিশিয়ে তৈরি খাবারের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। এই মিশ্রিত খাবারের প্রতি কেজির দাম ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা। কেউ আধা কেজি, কেউ ২৫০ গ্রাম করে কিনছেন।
শাহী জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতা মনসুর আলী জানান, গত বছর তিনি দুই কেজি ওজনের জিলাপি বিক্রি করেছেন। এবারও করবেন, তবে প্রথম দিন হওয়ায় এখনও এত বড় জিলাপি তৈরি করেননি।
সুতি কাবাব চকবাজারের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। গরুর সুতি কাবাব কেজি ১,২০০ টাকা, খাসির সুতি কাবাব ১,৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শাহি ছোলা ৩০০ টাকা, ঘুঘনি ২০০ টাকা, চিকেন আচারী ১,২০০ টাকা, কাশ্মীরি বিফ আচারী ১,৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চিকেন রোল ৫০ টাকা, হালিম ১০০ থেকে ৮০০ টাকা প্রতি বক্স পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়াও, চিকেন টিক্কা, চিকেন গ্রেভি, চিকেন ড্রামস্টিক, চিকেন কাটলেট, কিমা পরোটা, পনির পরোটা, দই বড়া, রস বুন্দিয়া, মুরগি মোসল্লাম, বিফ শিক কাবাব, বোরহানি, ডিম চপ, ভেজিটেবল রোল সবই পাওয়া যাচ্ছে। এসব খাবারের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে। বোতলজাত খাবার ৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইফতার কিনতে আসা পুরোনো ঢাকার বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়া জানান, প্রথম রোজা তাই পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করতেই এখানে এসেছেন। হালিম, জিলাপি, ঘুঘনি ও বিভিন্ন ধরনের কাবাব কেনার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় বেশিরভাগ পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে, তবে ছোটখাট জিনিসগুলোর দাম তেমন বাড়েনি।
জিগাতলা থেকে আসা রুহুল আমিন জানান, মূলত সুতি কাবাব কেনার জন্য এসেছেন। কয়েকটি দোকানে গিয়ে দেখেছেন, সুতি কাবাব ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই হাফ কেজি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ইফতারে চকবাজারের কোনও আইটেম না থাকলে অপূর্ণ লাগে, তাই এখান থেকে ইফতার কিনতে চলে এসেছেন।