ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা হামাসকে নির্মূল করবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। একইসঙ্গে রাফাহতে আক্রমণ ‘অরাজকতা’ উস্কে দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী হামাস যোদ্ধাদের চেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে; এমন মতের সঙ্গেও একমত হয়েছেন তিনি। সোমবার (১৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এনবিসি-এর ‘মিট দ্য প্রেস’-কে এসব কথা বলেন।
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে কোনো ধরনের হামলা না চালাতে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধসহ বিভিন্নভাবে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সতর্ক করেছেন, রাফা শহরে ইসরায়েলি হামলায় হামাস নির্মূল হবে না, বরং তা নৈরাজ্য উসকে দেবে।
রোববার (১২ মে) তিনি এ মন্তব্য করেন বলে এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস-এর এক অনুষ্ঠানে ব্লিঙ্কেন বলেন, রাফাহতে পূর্ণমাত্রায় ইসরায়েলি আক্রমণ সম্ভাব্যভাবে অবিশ্বাস্য চড়া মূল্য নিয়ে আসতে পারে। এমনকি রাফায় একটি বড় আক্রমণ হামাসের হুমকির অবসান ঘটাতে পারবে না।
সিবিএসের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী হামাস যোদ্ধাদের চেয়েও বেসামরিক লোককে বেশি হত্যা করেছে বলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিবৃতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত কিনা এ প্রশ্নের জবাবে ব্লিংকেন বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরাও তাই মনে করি।’
তিনি বলেন, রাফায় পূর্ণ মাত্রার অভিযানে অবিশ্বাস্য রকমভাবে হতাহতের ঘটনা ঘটবে। এমনকি রাফাহতে ব্যাপক অভিযান চালানো হলেও হামাসের হুমকিকে শেষ করা যাবে না।
মার্কিন এই কূটনীতিক আরও বলেন, হামাস যোদ্ধারা ইতোমধ্যে উত্তর গাজার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ফিরে এসেছে যেগুলোকে ইসরায়েল ‘মুক্ত করেছিল’।
ব্লিংকেন নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি স্থগিত রেখেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আরও কিছু করতে এবং রাফাহতে সর্বাত্মক আক্রমণ এড়াতে (ইসরায়েলের ওপর) চাপ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্লিংকেন বলেন, যুদ্ধ শেষ হলে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি নেতাদের ওপর চাপ দিয়ে চলেছে। তিনি এনবিসিকে বলেন, ‘গাজায় এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দিন কী হবে তার জন্য আমরা একটি পরিকল্পনাও দেখিনি। আমরা একটি স্থায়ী ফলাফল পাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আরও ভালো উপায় সম্পর্কে কথা বলেছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেবির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ ফোনালাপে রাফাতে ইসরায়েলের সম্ভাব্য বড় আক্রমণের বিষয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগের কথা হানেবিকে জানিয়ে দিয়েছেন সুলিভান।
ফোনালাপ নিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাফাহতে সম্ভাব্য একটি বড় ইসরায়েলি স্থল অভিযান নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের কথা সুলিভান আবার বলেছেন। সেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষের আশ্রয় রয়েছে।
হোয়াইট হাউস আরও বলেছে, হানেবি নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগকে বিবেচনায় নিচ্ছে ইসরায়েল। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ব্লিংকেন রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে রাফাহতে ব্যাপকভাবে স্থল অভিযান চালানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ইতোমধ্যে রাফার পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি বোমা হামলায় তিন লাখ ফিলিস্তিনি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ সতর্ক করে বলেছে, রাফাহতে পূর্ণমাত্রায় ইসরায়েলি আক্রমণ সেখানে থাকা উদ্বাস্তুদের ওপর একটি বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে। সেখানে অনেকেই নিদারুণ পরিবেশে থাকছেন।
রাফাহতে বেসামরিক মানুষ হতাহতের সংখ্যা ন্যূনতম রাখার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।