ঢাকা | বঙ্গাব্দ

গ্রিনল্যান্ডে ভোট শুরু

অতীতে গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনের ভোট খুব কমই বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তবে এই নির্বাচন ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করেছে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১১ মার্চ, ২০২৫
গ্রিনল্যান্ডে ভোট শুরু গ্রিনল্যান্ডের পার্লামেন্টের ভোট শুরু হয়েছে।

ট্রাম্পের দখল নেওয়ার হুমকির মধ্যে গ্রিনল্যান্ডে ভোট শুরু হয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের একটা বড় অংশের মানুষ ইউরোপের ডেনমার্ক থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা চাইছেন। গ্রিনল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষের আশা, এই নির্বাচনের ফলে স্বাধীনতার পক্ষে একটা শক্তিশালী জনমত তৈরি হতে পারে। তবে ডেনমার্কের তত্ত্বাবধানেই মঙ্গলবার ‘গ্রিনল্যান্ড স্বশাসিত অঞ্চলের’ আইনসভার নির্বাচন চলছে। নুউক থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।


‘যে কোনও ভাবে হোক’ বিশাল আর্কটিক দ্বীপটি নিজের হাতে পেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে বারবার তার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন তিনি। যার ফলে ৫৭ হাজার গ্রিনল্যান্ডবাসীর মধ্যে নির্বাচনটি ব্যতিক্রমী ভাবধারা সৃষ্টি করেছে। এ নির্বাচনে ৩১ আসনের জন্য ভোট গ্রহণ করা হবে। আর্কটিক অঞ্চলটির ভবিষ্যতের জন্য এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।


ডেনমার্কের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ‘বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ’ প্রায় ৩০০ বছর ধরে কোপেনহাগেনের নিয়ন্ত্রণে। অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি পরিচালনা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করেন দ্বীপটির স্বায়ত্তশাসিত কর্তৃপক্ষ। আর পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষানীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ডেনমার্ক সরকার। 


অতীতে গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনের ভোট খুব কমই বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তবে এই নির্বাচন ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প গত কয়েক মাসে একাধিক বার ডেনমার্ক দখলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে এই ভোটপর্ব ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।রোববার রাতে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডবাসীদের ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) অংশ হতে’ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি তার সামাজিক নেটওয়ার্ক ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে তাদের ‘ধনী’ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।


জানুয়ারিতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ট্রাম্পের এ ধারণার বিরোধী। তারা ট্রাম্পের এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ৫৮ বছর বয়সী জাহাজ মেরামতকারী রেনে ওলসেন সোমবার এএফপিকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকান হতে চাই না।’ তবে ট্রাম্পের বক্তব্য নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব ফেলেছে। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মুট এগেডে তার বক্তব্যকে ‘অপ্রত্যাশিত’ অভিহিত করেছেন। ডেনমার্কের সঙ্গে দ্বীপটির ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলমান রয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য এ বিতর্ককে আরো উসকে দিয়েছে।


৩১ আসনের গ্রিনল্যান্ড পার্লামেন্টে চার বছর অন্তর নির্বাচন হয়। দ্বীপের মোট জনসংখ্যা ৫৬ হাজার। ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৪ হাজার। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ‘জাদু সংখ্যা’ ১৬ আসন। এ বারে নির্বাচনে মোট ছয়টি দলের প্রার্থীরা লড়ছেন। ঘটনাচক্রে, তার মধ্যে পাঁচটি দলই ডেনমার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রিনল্যান্ডের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে। নির্বাচনের ফলাফল বুধবার জানা যাবে। গ্রিনল্যান্ডে বর্তমানে ক্ষমতায় আছে কমিউনিটি অব দ্য পিপল (আইএ) এবং ফরোয়ার্ড (এস) দলের জোট সরকার।


প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট হয়েই কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডকে কিনতে চান ট্রাম্প। কিন্তু ওই ‘স্বশাসিত’ দ্বীপের উপর ইউরোপীয় দেশ ডেনমার্কের অধিকার আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। কয়েক মাস আগে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে লিখেন, ‘সারা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ এই মুহূর্তে অপরিহার্য।’ পত্রপাঠ সেই দাবি খারিজ করে ডেনমার্ক। কিন্তু এর পর সরাসরি বলপ্রয়োগের কথা বলেন হোয়াইট হাউসের নতুন মালিক।


নির্বাচনে জয়ের পরে ফ্লোরিডা রিসর্টে সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে পানামা এবং গ্রিনল্যান্ডের ক্ষেত্রে সামরিক ও অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগ করবেন না, বিশ্বকে তিনি এমন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, ওই দু’টি কোনওটির বিষয়েই কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের ওই দু’টিকেই (পানামা খাল এবং গ্রিনল্যান্ড) প্রয়োজন।


সূত্র: এএফপি, এপি, রয়টার্স


এসজেড