বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ নতুন করে আটটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (এনডিএম) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
তারেক রহমান বলেন, "এখানে উপস্থিত সব দলের মতাদর্শ এক নয়, তবে গণতন্ত্র ও মানবিক বাংলাদেশের লক্ষ্যে আমরা একত্রিত হয়েছি। যেখানে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, সেখানে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব।"
তিনি আরও বলেন, "গত ১৫ বছর ধরে আমরা মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য হলো একটি ইতিবাচক পরিবর্তন, যেখানে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হবে।"
তারেক রহমান উল্লেখ করেন যে বিএনপি ইতোমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার পরিকল্পনা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। এই ধারাবাহিকতায় নতুন সংস্কারের প্রস্তাবও স্বাগত জানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, "জনগণের কল্যাণে যেকোনো গঠনমূলক আলোচনা প্রয়োজন। রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশ ও জনগণকে এগিয়ে নেওয়া।"
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ ব্যবস্থা দ্বিকক্ষ হলে তার সুফল কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি, কেউ যেন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন—এই প্রস্তাব আগেই দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়েও আলাপ চলছে।
তারেক রহমান মনে করেন, "রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু জনগণ। তাই সংস্কার পরিকল্পনাও জনগণের প্রয়োজনে হওয়া উচিত। আমরা কেবল রাজনৈতিক কাঠামো নয়, বরং অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছি।"
তিনি তার সংস্কার ভাবনায় আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন—
১. দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছে। উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে কীভাবে দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে রাখা যায়, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে গভীর আলোচনা করা উচিত।
সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা: ২০ কোটি মানুষের জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি।
শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার: সঠিক শিক্ষানীতি ছাড়া দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি: কৃষির উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সংস্কারের অপরিহার্য অংশ।
শিল্প খাতের বিকাশ: টেকসই শিল্পায়ন ও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার পথ বের করা দরকার।
পরিবেশ দূষণ রোধ: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ দূষণ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলা করা জরুরি।
নিরাপদ পানি সরবরাহ: বিশুদ্ধ পানির সংকট থেকে ২০ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে কার্যকর সংস্কার প্রয়োজন।
জ্বালানি নিরাপত্তা: দেশের জ্বালানির চাহিদা কীভাবে পূরণ করা যায়, তা নিয়েও গভীর পরিকল্পনা করা জরুরি।
তারেক রহমান বলেন, "সমালোচনা করা সহজ, কিন্তু সঠিকভাবে সমস্যা সমাধান না করলে দেশের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের সকলকে দেশের উন্নতির জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে।"
thebgbd.com/NA