রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর শরীরকে উজ্জীবিত রাখতে পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ইফতারে ভাজাপোড়া ও তেলযুক্ত খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়েন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অথচ শরীরকে সুস্থ ও চাঙা রাখতে শাক-সবজি হতে পারে দুর্দান্ত বিকল্প। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় শাক-সবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা শুধু শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণই করবে না, বরং হজমশক্তি বাড়িয়ে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতেও সাহায্য করবে।
শাক-সবজি কেন জরুরি?
রমজানে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। শাক-সবজি খেলে তা পূরণ করা সম্ভব, কারণ এতে উচ্চমাত্রার পানি ও ফাইবার থাকে। পাশাপাশি এটি হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। তাছাড়া শাক-সবজির মধ্যে থাকা ভিটামিন ও খনিজ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রোজায় সুস্থ থাকতে সহায়ক।
কোন কোন শাক-সবজি রাখবেন?
রমজানে এমন শাক-সবজি খাওয়া উচিত, যা সহজে হজম হয় ও শরীরের জন্য উপকারী। কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাক-সবজি হলো:
শসা: শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে ও হাইড্রেটেড রাখে।
লাউ: হজমের জন্য উপকারী ও শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক।
পালং শাক: আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস, যা ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
গাজর: চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও ত্বক উজ্জ্বল করে।
টমেটো: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা শরীরের টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে।
ক্যাপসিকাম ও ব্রোকোলি: ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
শাক-সবজি কীভাবে খাবেন?
শাক-সবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। ভাজাপোড়া না করে তাজা বা সিদ্ধ সবজি খাওয়াই ভালো। সালাদ, ভাপানো বা গ্রিল করা সবজি ইফতারের জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
সালাদ: শসা, টমেটো, গাজর, ক্যাপসিকাম, লেটুস, বাঁধাকপি ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি সালাদ হজমে সহায়ক ও পুষ্টিকর।
সবজি স্যুপ: লাউ, গাজর, ব্রোকোলি ও মটরশুঁটি দিয়ে হালকা স্যুপ ইফতারে রাখতে পারেন।
ভাপানো সবজি: সামান্য লবণ ও অলিভ অয়েল দিয়ে ভাপানো সবজি সহজে হজম হয় ও পেটের জন্য ভালো।
সবজি রুটি বা পরোটা: পালং শাক বা মেথি শাক দিয়ে তৈরি পরোটা সেহরির জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে শাক-সবজিকে গুরুত্ব দিন
রমজানে অনেকেই ইফতারে সমুচা, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপসহ বিভিন্ন ভাজাপোড়া খাবার বেশি খান। এসব খাবারে অতিরিক্ত তেল ও ফ্যাট থাকায় তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এর ফলে অ্যাসিডিটি, বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। তাই ইফতার ও সেহরিতে ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে শাক-সবজির দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
পুষ্টিবিদরা বলছেন, রমজানে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। ভাজাপোড়া ও মসলাযুক্ত খাবারের পরিবর্তে বেশি পরিমাণ শাক-সবজি খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তাছাড়া প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীরে পানির ঘাটতি না হয়।
রমজানে সুস্থ থাকতে হলে সঠিক খাবার নির্বাচন করতে হবে। প্রতিদিনের ইফতার ও সেহরিতে শাক-সবজি রাখার মাধ্যমে আপনি সুস্থ ও চাঙা থাকতে পারবেন। তাই স্বাস্থ্যকর রোজার জন্য এখন থেকেই শাক-সবজিকে আপনার খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।