বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বরাতে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম রোববার জানিয়েছে, উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ায় শনিবার একটি অবিস্ফোরিত গোলা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে, এতে ১৮ আহত হয়েছে। একজন স্ক্র্যাপ ডিলার (ভাঙ্গারি দোকানদার) অবিস্ফোরিত একটি গোলা ভুলভাবে ব্যবহারের কারণে এটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। দামেস্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
বিস্ফোরণে একটি চার তলা ভবন ধসে পড়ে। কংক্রিটের স্ল্যাব ভেঙে পড়ে। এতে বাসিন্দারা তাদের বাড়ির নিচে চাপা পড়ে যায়। উদ্ধারকারী দল রাতভর লাশগুলো উদ্ধার করেন। এদের মধ্যে পাঁচ শিশু রয়েছে। জীবিতদের সন্ধানে তল্লাশী অভিযান চলছে। সিরিয়ার সানা সংবাদ সংস্থার ছবিতে দেখা যায়, লাতাকিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-রিমাল এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে। ভবনটি যেখানে এক সময় দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে ধ্বংসস্তূপের স্তূপ দেখা গেছে ছবিতে।
সংবাদ সংস্থাটি এর আগে জানায়, লাতাকিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-রিমালের একটি হার্ডওয়্যার দোকানে বিস্ফোরণে আট জন নিহত হয়েছে। সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, চার তলা ভবনের ভেতরে অবস্থিত দোকানটিতে বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে তিন শিশু এবং একজন মহিলা রয়েছেন এবং আরও চার শিশুসহ মোট ১৮ জন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
ব্রিটেন-ভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসও বিস্ফোরণটিকে ‘একজন বাসিন্দার অবিস্ফোরিত গোলা ভাঙার চেষ্টার ফলে ঘটা দুর্ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছে। লাতাকিয়ার ৩২ বছর বয়সী বাসিন্দা ওয়ার্দ জামমৌল সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, তিনি এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, একটি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। চারদিকে ধোঁয়া ও ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে পড়েছে, আহতদের চিৎকারে পরিবেশ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।
সানা প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, আর স্থানীয়রা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে সহযোগিতা করছে। সংবাদ সংস্থার প্রকাশিত একটি ছবিতে জনবহুল এলাকার ওপর ধোঁয়ার বিশাল স্তূপ দেখা গেছে।
বেসরকারি সংস্থা হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশনের গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে অবশিষ্ট অবিস্ফোরিত অস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। এতে বলা হয়েছে যে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত প্রায় ১০ লাখ গোলাবারুদের মধ্যে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ বিস্ফোরিত হয়নি।
সিরিয়ার জনগণ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর প্রথমবারের মতো তাদের বিদ্রোহের ১৪তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য যখন জমায়েত হচ্ছিল, ঠিক সময়েই শনিবারের বিস্ফোরণটি। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে সিরিয়ার বিদ্রোহ শুরু হয়। হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয় ওই বিক্ষোভে। তিনি বিক্ষোভ দমন করার পর এটি পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ৮ ডিসেম্বর ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের হাতে আসাদের পতনের পর এ বছর স্মরণসভা পালিত হচ্ছে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড