ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মুখের ভেতর ঘা হওয়ার মূল কারণ

মুখের ভেতর ঘা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
  • | ১৬ মার্চ, ২০২৫
মুখের ভেতর ঘা হওয়ার মূল কারণ মুখের ভেতর ঘা

মুখের ভেতর ঘা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। এটি বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে কিছু সাময়িক ও স্বল্পমেয়াদী, আবার কিছু দীর্ঘমেয়াদী বা জটিল রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। মুখের ঘা সাধারণত সাদা বা হলুদ রঙের হয় এবং এর চারপাশ লালচে থাকে। এটি খাবার খাওয়া, কথা বলা বা এমনকি পানি পান করার সময়ও ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।


মুখের ঘা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি। বিশেষ করে ভিটামিন বি-১২, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব হলে মুখে ঘা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া, জিঙ্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিও এর জন্য দায়ী হতে পারে। অনিয়মিত ও অসম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস এই সমস্যার অন্যতম উৎস।


অতিরিক্ত মশলাদার বা গরম খাবার গ্রহণ, ধূমপান ও অ্যালকোহল পান করার অভ্যাসও মুখের ভেতর ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় দাঁত ব্রাশ করার সময় বেশি জোরে ঘষার কারণে বা ভুলভাবে দাঁতের ফিলিং বা ব্রেসেস লাগানোর ফলেও মুখে ঘা দেখা দিতে পারে।


মানসিক চাপ ও উদ্বেগও মুখের ঘা হওয়ার অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, ফলে মুখের ভেতরের নরম টিস্যু সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইভাবে, অপর্যাপ্ত ঘুম ও দুর্বল ইমিউন সিস্টেমও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।


মুখের ভেতরের ঘা অনেক সময় ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণেও হয়ে থাকে। হার্পিস সিম্প্লেক্স ভাইরাস সংক্রমণের ফলে অনেকের ঠোঁট বা মুখের ভেতরে ফোলাভাব ও ব্যথাযুক্ত ঘা দেখা দিতে পারে। আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল সংক্রমণও এর জন্য দায়ী হতে পারে।


গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যাও মুখে ঘা হওয়ার একটি বড় কারণ। পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড মুখের ভেতরের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ঘা হিসেবে দেখা দেয়।


কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও মুখের ঘা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে স্টেরয়েড, কেমোথেরাপি ওষুধ, এবং কিছু ব্যথানাশক ওষুধ মুখের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়, যা ঘা তৈরির কারণ হতে পারে।


অটোইমিউন রোগ যেমন বেহসেটস ডিজিজ, লুপাস বা ক্রোন্স ডিজিজের মতো কিছু দীর্ঘমেয়াদী রোগের ক্ষেত্রেও মুখের ভেতরে ঘা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়, কারণ তাদের ক্ষত সারানোর ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে।


এছাড়া, ক্যানসার বা প্রি-ক্যানসারাস অবস্থা থেকেও দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাময় না হওয়া মুখের ঘা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে, মুখের ঘা যদি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় এবং ক্রমশ বড় হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


মুখের ঘা কমানোর জন্য সাধারণত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, প্রচুর পানি পান করা, মুখ পরিষ্কার রাখা এবং ধূমপান বা অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা খুব বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।