ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রমজানের শেষ ১০ দিনের বিশেষ আমল

রমজান মাস ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, এবং এই মাসের শেষ ১০ দিন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ মার্চ, ২০২৫
রমজানের শেষ ১০ দিনের বিশেষ আমল ছবি : সংগৃহীত

রমজান মাস ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, এবং এই মাসের শেষ ১০ দিন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষত এই ১০ দিন তওবা, ইবাদত, দোয়া এবং নফল আমলের জন্য আদর্শ সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। রমজান মাসের শেষ দশ দিনে বিশেষভাবে লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) পাওয়া যায়, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই সময়ে মুসলমানরা আরও বেশি ইবাদত করতে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চেষ্টা করেন। নিচে রমজানের শেষ ১০ দিনের বিশেষ আমলসমূহ তুলে ধরা হলো:


১. ইতিকাফ (আলাদা হয়ে এবাদত করা)

রমজান মাসের শেষ দশ দিন বিশেষভাবে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত। ইতিকাফ মানে হল, মুসলমানদের মসজিদে অবস্থান করে শুধু ইবাদত করা এবং দুনিয়াবী বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকা। এটি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, ইবাদতের জন্য নিবেদিততা এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রার্থনার একটি উপায়।


২. কদরের রাতের অনুসন্ধান

রমজান মাসের শেষ দশ দিন বিশেষভাবে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করতে বলা হয়। সাহাবিরা সাহসিকতার সঙ্গে এই রাত খুঁজতেন এবং ইবাদত করতেন, কেননা এই রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ। কদরের রাতটি অদৃশ্য, তবে বিশেষভাবে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রাত্রি বেশি সম্ভাব্য। এই রাতে আল্লাহর রহমত, ক্ষমা, ও মুক্তির প্রার্থনা করা উচিত।


৩. তাহাজ্জুদ নামাজ (নফল রাতের নামাজ)

রমজানের শেষ দশ দিনে তাহাজ্জুদ নামাজ একটি বিশেষ আমল। এই রাতে নির্জন অবস্থায় উঠে আল্লাহর কাছে দোয়া করা, ইবাদত করা এবং তওবা করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ দয়া এবং ক্ষমা লাভের উপায়।


৪. দোয়া ও ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)

রমজানের শেষ দশ দিনে বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। বিশেষত লাইলাতুল কদর এবং পুরো রমজানে, মুসলমানদের উচিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাঁদের ভুলের জন্য তওবা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "রমজান মাসে যারা আল্লাহর কাছে তওবা করবে, তাদের জন্য আল্লাহর রহমত থাকে।"


৫. কোরআন তেলাওয়াত (পাঠ)

রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিশেষত শেষ দশ দিনে কোরআন তেলাওয়াত করার মাধ্যমে একদিকে যেমন আত্মবিশ্লেষণ ঘটে, অন্যদিকে আল্লাহর সঙ্গে একাত্মতা অনুভূত হয়। কোরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী হওয়া যায়।


৬. সাদকাহ ও দান করা

রমজান মাসে সাদকাহ প্রদান অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। বিশেষত শেষ দশ দিনে দান ও সাদকাহ বৃদ্ধি করা উচিত। এতে শুধুমাত্র দুঃখী-গরিবের উপকার হয় না, বরং এটি আল্লাহর কাছে অপরিসীম পুরস্কারের কারণ হয়। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনে বেশি দান করতেন।


৭. নফল রোজা (ঐচ্ছিক রোজা)

রমজান মাসের শেষ দশ দিনে কোনো ব্যক্তি যদি আরও একটি রোজা রাখতে চায়, তবে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে ইবাদত এবং আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ নিবেদিত থাকার বার্তা যায়।


৮. আল্লাহর নাম স্মরণ (যিকির)

রমজানের শেষ দশ দিনে আল্লাহর নাম বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এবং অন্যান্য যিকিরের মাধ্যমে হৃদয়ে আল্লাহর কাছে নিবেদিত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত।


৯. পূর্বে করা ভুলের জন্য তওবা ও ক্ষমা চাওয়া

রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে, একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল পবিত্র আল্লাহর কাছে পূর্বে করা ভুল, গুনাহ এবং মন্দ কাজের জন্য ক্ষমা চাওয়া। এই সময় প্রতিটি মুসলমানকে স্বীকার করতে হবে যে তারা একমাত্র আল্লাহর কাছে তওবা করতে চায় এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের অন্তর পরিষ্কার করতে চায়।



রমজানের শেষ দশ দিন মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়, এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইবাদত, তওবা, দোয়া এবং সাদকাহ প্রার্থনা করার সুযোগ। এই সময়টি আত্মপরিচয়, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভের শ্রেষ্ঠ সময়।


thebgbd.com/NA