মস্তিষ্ক শুকিয়ে যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে, যা সাধারণত বয়স, জীবনযাত্রা, এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হতে পারে। মস্তিষ্কের আকার এবং কার্যক্ষমতা বয়সের সঙ্গে কমতে পারে, তবে কিছু স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং অভ্যাসও এটি বাড়াতে বা ত্বরান্বিত করতে পারে। নিচে কিছু প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
১. বয়স বৃদ্ধি: বয়স বাড়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের আকার কিছুটা কমে যেতে পারে। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষ (নিউরন) সংখ্যা কমতে পারে এবং তাদের সংযোগ শক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে।
২. অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ ও ডিমেনশিয়া: এই ধরনের স্নায়ুবিক রোগ মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করতে পারে, ফলে মস্তিষ্কের আকার কমে যেতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অ্যালঝাইমার্স রোগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলো ভেঙে যায় এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষমতা কমে যায়।
৩. স্ট্রোক: স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে সেই অংশের মস্তিষ্ক কোষ মারা যায়। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের কিছু অংশের আকার কমে যেতে পারে এবং কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
৪. ডায়াবেটিস: অতিরিক্ত রক্তে গ্লুকোজ (শর্করা) থাকার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের আকার এবং কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে মস্তিষ্কে অণুজীবগত ক্ষতি হতে পারে।
৫. অলস জীবনযাত্রা (Sedentary lifestyle): নির্বিঘ্ন জীবনযাপন, শরীরচর্চার অভাব এবং পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যক্রম না করা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। শরীরচর্চা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং নিউরোপ্লাস্টিসিটি (মস্তিষ্কের কোষের নতুন সংযোগ তৈরি করার ক্ষমতা) বাড়ায়।
৬. অতিরিক্ত মদ্যপান ও ড্রাগের ব্যবহার: অতিরিক্ত মদ্যপান এবং মাদক সেবন মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে মস্তিষ্কের আকার কমিয়ে দিতে পারে। এটি মস্তিষ্কের নিউরনগুলির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং মানসিক অবস্থা প্রভাবিত করতে পারে।
৭. স্ট্রেস ও উদ্বেগ: বেশি উদ্বেগ এবং দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। স্ট্রেস হরমোন, যেমন করটিসোল, মস্তিষ্কের কোষে ক্ষতিসাধন করতে পারে, যা মস্তিষ্কের আয়তন কমাতে সাহায্য করে।
৮. পুষ্টির অভাব: বিভিন্ন পুষ্টির অভাব, যেমন ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমাতে পারে এবং মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করতে পারে।
৯. প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও অবস্থার অভাব: বিভিন্ন অবস্থা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, এবং মানসিক চাপ মস্তিষ্কের ক্ষতিতে অবদান রাখতে পারে। এসব অবস্থার চিকিৎসা না করা হলে মস্তিষ্কের শুকানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে।
মস্তিষ্কের শুকিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো বয়স, রোগ, ও জীবনযাত্রার অভ্যাস। কিছু রোগ যেমন অ্যালঝাইমার্স, ডায়াবেটিস, এবং স্ট্রোক মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ ছাড়া শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করতে পারে।