রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ি এবং নতুন ১৮ ওয়ার্ড প্রকল্পের অন্তর্গত উত্তরা আজমপুর কাঁচা বাজার হতে চামুরখান পর্যন্ত সড়ক পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে এই দু’টি সড়কের উদ্বোধন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সড়ক দু’টি উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, 'আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেসব জায়গায় জনদুর্ভোগ হচ্ছে সেসব জায়গায় অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবো। সেই অনুযায়ী এক নম্বর অগ্রাধিকারে ছিল উত্তরা থেকে মিরপুর-১২ (মিরপুর ডিওএইচএস) নাম্বার যাওয়ার রাস্তাটি। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম রোজার মধ্যেই রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করবো। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঈদের আগে ঈদের উপহার হিসেবে উত্তরা থেকে মিরপুর-১২ (মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে মিরপুর ডিএএইচএস) যাওয়ার রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধন করলাম। ঈদে অনেকে এখানে ঘুরতে আসবে। মানুষ যেন আনন্দে ও নির্বিঘ্নে ঘুরতে আসতে পারে সেটি মাথায় রেখেই রাস্তাটি নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'রাস্তাটি জলাধারের উপর দিয়ে গিয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করতেই আমরা সাময়িকভাবে এই রাস্তাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দিয়েছি। ডিএনসিসির কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। জলাধারের পানির প্রবাহ বজায় রাখতে ভবিষ্যতে উঁচু ব্রিজ করে স্থায়ী রাস্তা নির্মাণ করা হবে। জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আমরা সাময়িকভাবে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কাছে আবেদন করি। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডকে ধন্যবাদ অনুমোদনের জন্য। তাদের সহযোগিতায় ঈদের আগেই রাস্তাটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি।'
'রাস্তাটি আগে এক লেনের ছিল বর্তমানে দুই লেন করা হয়েছে। রাস্তার দুইপাশে সবুজায়নের জন্য বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। জনগণকে ভালো কাজ উপহার দিতে আমরা নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি' বলে যোগ করেন ডিএনসিসি প্রশাসক।
নতুন ওয়ার্ডে প্রয়োজন বেশি তাই সেখানে উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, '৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে ডিএনসিসি গঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে ১৮টি ওয়ার্ড নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে। নতুন ১৮টি ওয়ার্ড আসলে গ্রাম, তেমন উন্নয়ন অবকাঠামো হয়নি। আমি দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকাকে একটি ন্যায্য শহর হিসেবে গড়ে তুলবো। ন্যায্য শহর গড়তে হলে সেসব জায়গায় বেশি উন্নয়ন ও ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে যেসব জায়গায় প্রয়োজন বেশি। যেখানে প্রয়োজন কম, সেখানে ইনভেস্টমেন্ট কম হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি সবসময় যেসব জায়গায় পয়সাওয়ালারা, প্রভাবশালীরা বেশি থাকে সেসব জায়গায় বেশি ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে। সেসব জায়গা বেশি সুন্দর করার জন্য সবাই ঝাপিয়ে পড়তো। কিন্তু আমি চাই যেসব জায়গায় প্রয়োজন বেশি সেসব জায়গায় বেশি উন্নয়ন ও ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে৷'
ডিএনসিসি প্রসাশক বলেন, 'হিসাব অনুযায়ী নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। তাই নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এয়ারর্পোট থেকে দক্ষিণখান ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমের যে সংযোগ সড়ক সেগুলোর কাজ চলমান। আজমপুর কাঁচাবাজার থেকে চামুরখান ব্রিজ পর্যন্ত ৩.৬ কিমি প্রধান সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, আজকে উদ্বোধন করে দিচ্ছি। ঈদের পরেই এয়ারপোর্ট থেকে কাউলা সড়কটিও সম্পন্ন হয়ে যাবে।'
তিনি বলেন, 'নতুন ১৮ ওয়ার্ড এলাকায় মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। ভাড়াটিয়ারা চলে যেতো বাসা ছেড়ে, এমনকি বাড়িওয়ালারাও থাকতে চাইতো না। নতুন এলাকায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই এলাকায় কোন প্ল্যান ছিল না। মানুষ রাস্তার জায়গা না ছেড়ে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি বানিয়েছে। আমাদের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠান বৈঠক করে রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়ার অনুরোধ করেছে। তাদেরকে বুঝিয়েছে রাস্তা প্রশস্ত হলে অনেক সুবিধা হবে, নির্বিঘ্নে এম্বুলেন্স চলতে পারবে। এভাবে কিছুটা প্রশস্ত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ৭০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা করতে হবে এই এলাকায়। মাস্টারপ্লান আছে, সেভাবে ভবিষ্যতে করা হবে যেন পুরো অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়।'
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে প্রধান সড়কগুলোর মেরামত প্রায় শেষ করেছি। সব প্রধান সড়কের গর্তগুলো মেরামত করে উঁচু নিচু রাস্তা সমান করা হয়েছে। পাঁচ আগস্টের পর অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছে। তাই পিপিআর রুল অনুসরণ করে কাজ করায় কিছুটা সময় প্রয়োজন। পিপিআর স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করায় অলিগলি ও ভিতরের রাস্তাগুলো করতে একটু সময় লাগছে৷ আমাদের লোকবলও খুবই কম। প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ২০শতাংশ লোকবল নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের টিম দিনরাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমি ঈদের পরে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাব। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভিতরের রাস্তা নির্বাচন করে দ্রুতই সেগুলোর কাজ করবো।'
thebgbd.com/NA