আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে দেশের পোশাক কারখানাগুলোর বেশির ভাগ শ্রমিক তাদের বেতন ও উৎসব ভাতা পেয়েছেন। এতে শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে, উদ্যোক্তারাও চাপমুক্ত হয়েছেন। তবে এখনো কিছু কারখানায় বেতন-বোনাস বাকি থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে, তবে এখনো ২৯৯টি কারখানা বোনাস দেয়নি। মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৮৩ দশমিক ২০ শতাংশ কারখানা, যদিও ৪৫ শতাংশ কারখানা এখনো মার্চ মাসের বেতন দেয়নি।
শিল্প পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পাটকল, অন্যান্য কারখানাসহ মোট ৯ হাজার ৬৯৫টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৩৯টি ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে। তবে চার হাজার ৩৫২টি এখনো মার্চ মাসের বেতন দেয়নি, যা মোট কারখানার ৪৫ শতাংশ।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘সরকার বলছে প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে যে হিসাব রয়েছে, তাতে ১০ শতাংশেরও বেশি কারখানায় বেতন-বোনাস হয়নি। শনিবারও দেওয়ার কথা আছে। শনিবার বিকেল নাগাদ বাস্তব চিত্র পাওয়া যাবে। কারণ এরপর তো আর বেতন-বোনাস দেওয়ার সুযোগ নেই।’
বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান জানান, ২৭ মার্চ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ কারখানা। মার্চ মাসের ১৫ বা ৩০ দিনের বেতন পরিশোধ করেছে ৮৩ দশমিক ২০ শতাংশ কারখানা। ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ কারখানা। ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ ০.৪৭ শতাংশ কারখানায় প্রক্রিয়াধীন।
গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে ঢাকায় শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। মালিকপক্ষ এক কোটি টাকা পরিশোধের প্রস্তাব দিলেও শ্রমিকদের দাবিকৃত পাওনা সাত কোটির বেশি। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বেতন-বোনাস না পেলে ঈদের দিন ভুখা মিছিল করবেন।
বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত নয় এমন কিছু কারখানায়ও বেতন-বোনাস বকেয়া রয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, ১০ শতাংশ কারখানায় এখনো পরিশোধ হয়নি। শনিবার (২৯ মার্চ) বকেয়া পরিশোধের শেষ সুযোগ, কারণ ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে আর বেতন-বোনাস দেওয়া সম্ভব হবে না।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার দাবি করেছেন, শ্রম মন্ত্রণালয় যথাযথ উদ্যোগ নিলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তিনি বলেন, সরকার বলছে প্রায় সব শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে অনেক কারখানায় শ্রমিকরা এখনো পাওনা পাননি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১২১টি কারখানা এখনো বোনাস দেয়নি, তবে তারা শনিবারের মধ্যে পরিশোধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৮০ শতাংশ কারখানা।
বিজিএমইএর নির্দেশনা অনুযায়ী, ২৬ থেকে ২৯ মার্চের মধ্যে ধাপে ধাপে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে, যাতে মহাসড়কে যানজটের চাপ কমে।
বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। শনিবারের মধ্যে যদি সব শ্রমিক তাদের পাওনা না পান, তাহলে বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
thebgbd.com/NIT