ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে স্টারলিংক: টেলিযোগাযোগ খাতে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা

ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’ বাংলাদেশে আগামী ৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৩ এপ্রিল, ২০২৫
বাংলাদেশে স্টারলিংক: টেলিযোগাযোগ খাতে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছবি : সংগৃহীত

ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’ বাংলাদেশে আগামী ৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। যা দেশের ইন্টারনেট বাজারে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিকাঠামোতে এটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলেও মনে করা হচ্ছে।


ধারণা করা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বড় কোম্পানি এবং ই-কমার্স ও ডিজিটাল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো স্টারলিংকের গ্রাহক হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, এই নতুন প্রযুক্তি দেশের ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা তেমন কোনো চাপ অনুভব করছেন না।


টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্টারলিংক শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতাই বদলাবে না, বরং অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষিসহ নানা খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। বিশেষত, এটি সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আনতে পারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে ফাইবার অপটিক পৌঁছানো কঠিন। স্টারলিংকের মাধ্যমে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট সরবরাহ করা সম্ভব হবে।


এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের (এপনিক) এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সদস্য এবং ইন্টারনেট প্রকৌশলী সুমন আহমেদ সাবির বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক সংযোজন। এর মাধ্যমে অনেক ধরনের পরিষেবা পাওয়া যাবে, এবং সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে দুর্গম এবং প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো। এতে দেশের ইন্টারনেট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভালো প্রতিযোগিতাও তৈরি হবে।


বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্টারলিংক চালুর উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবার বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে, যা একটি ভালো দিক। তবে, স্টারলিংক নিয়ে আইএসপিগুলোর বড় কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, স্টারলিংক ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো কঠিন হবে। এছাড়া সারাদেশে আইএসপিগুলোর প্রায় ৮৪-৮৫ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছে। 


তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক এবং দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সেবা চালু হলে স্টারলিংকের ভূমিকা বড় হবে, বিশেষত ফ্রিল্যান্সারদের জন্য। বর্তমানে যেসব ব্রডব্যান্ড কানেকশন ব্যবহার হচ্ছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর হচ্ছে না। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালু হলে তাদের সমস্যা সমাধান হবে। তবে, আইএসপিগুলোর সহযোগিতা এবং সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।


দেশীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন স্যাটেলাইট সেবার আগমন ঘিরে সতর্ক ও বিশ্লেষণধর্মী অবস্থানে রয়েছে। তারা জানায়, ফাইবারের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য স্বল্প খরচে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে।


স্টারলিংক চালু হলে, দেশীয় আইএসপিগুলো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। আমরা স্বল্প খরচে ব্রডব্যান্ড সেবা দিচ্ছি, যা স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দিতে পারবে না। তবে, কর্পোরেট ক্ষেত্রের কিছু গ্রাহক হারাতে হতে পারে। সরকারের উচিত আমাদের রক্ষার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা।


স্টারলিংক, যেহেতু একটি প্রিমিয়াম সেবা, তা শহরাঞ্চলে অনেকের জন্য কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে। একটি স্থানীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, দেশজুড়ে আমাদের একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু রয়েছে। এখন আমাদের ফাইবার নেটওয়ার্কের উন্নতিতেই বেশি জোর দিচ্ছি। আমরা গ্রাহকদের জন্য স্বল্প খরচে মানসম্মত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। 


ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, স্টারলিংক চালু হলে, দেশীয় আইএসপিগুলো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। তবে শহরগুলোতে স্টারলিংকের সেবা দেওয়ার অনুমোদনের দরকার ছিল না। দেশের পাহাড়ি ও প্রত্যন্ত যে সকল অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পৌঁছানো সম্ভব নয় সেসব এলাকায় স্টারলিংককে অনুমোদন দিলে ভালো হতো। এখন সরকার যেহেতু নতুন প্রযুক্তি দিতে চাচ্ছে আমরাও সেটিকে প্রতিযোগিতা হিসেবেই নেব। সবমিলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।


তিনি আরও বলেন, আমরা স্বল্প খরচে ব্রডব্যান্ড সেবা দিচ্ছি, যা স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দিতে পারবে না। তবে, কর্পোরেট ক্ষেত্রের কিছু গ্রাহক হারাতে হতে পারে। সরকারের উচিত আমাদের রক্ষার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা।


একইসঙ্গে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন গ্রাম-অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার মান বাড়াতে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।



thebgbd.com/NA