ঢাকা | বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ: পাল্টা ছাড় দিতে উদ্যোগী বাংলাদেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৬ এপ্রিল, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ: পাল্টা ছাড় দিতে উদ্যোগী বাংলাদেশ সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসাসামগ্রীতে ৫০ শতাংশ শুল্কছাড় দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে যেসব মার্কিন পণ্যে আগে থেকেই শুল্ক নেই, সেগুলো বিনা শুল্কে আমদানির নীতিও অব্যাহত রাখার চিন্তা চলছে। এই প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক আলোচনা ও সমঝোতার আশায় বাংলাদেশ আগামী তিন মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে নতুন শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখার প্রস্তাবও দিতে পারে।


গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কার্যালয়ে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে একটি চিঠির খসড়াও তৈরি করা হয়, যা তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। চিঠিটি সরাসরি পৌঁছে দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।


প্রসঙ্গত, ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের সব দেশের পণ্যে ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্কসহ বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা কার্যকর হবে ৯ এপ্রিল থেকে। তবে আলোচনার পথ খোলা রেখে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যায়নি। এই সুযোগে বাংলাদেশ বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে।


বৈঠকে জানানো হয়, কেবল শুল্কই নয়, অশুল্ক বাধা কমাতেও কাজ চলছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কটন বা সুতা আমদানিতে ফিউমিগেশনের শর্ত বাতিল, গুদামজাত অনুমতি দেওয়া এবং মার্কিন কৃষি ও প্রযুক্তিপণ্যে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওয়ালমার্ট, শেভরন, মেটা, টেসলা ও বোয়িংয়ের মতো ফরচুন ৫০ কোম্পানির জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাবও বিবেচনায় রয়েছে।


চিঠির খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য চারটি পণ্যের নামও উল্লেখ করা হয়েছে: ক্যালসিয়াম কার্বনেট, হিমায়িত বা তাজা পশুর মৃতদেহ, হাড়সহ ও হাড়বিহীন পশুর মাংসের টুকরা। বর্তমানে বাংলাদেশ যেসব মার্কিন পণ্য বিনা শুল্কে আমদানি করছে, তার মধ্যে রয়েছে কটন, সয়াবিন, বিউটেনাস, সমুদ্রগামী জাহাজ এবং এলএনজি।


বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব ইতিমধ্যে দেশের কারখানাগুলোর ওপর পড়তে শুরু করেছে। ক্রেতারা বাড়তি শুল্কভার সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন। যদিও সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা আশাবাদী, বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি থেকে লাভবান হতে পারে। তবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কম হওয়ায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।


বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসা পণ্যে গড় শুল্কহার ছিল ৬ শতাংশ। তবে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কর সমন্বয় করে ফেলে বলে কার্যত তা ২ দশমিক ২০ শতাংশে নেমে আসে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মতে, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যেখানে অশুল্ক বাধা ও মুদ্রার বিনিময় হারও বিবেচনায় নেওয়া হয়।


গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ হাজার ৫১৫টি এইচএস কোডের পণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। সর্বোচ্চ শুল্কহার ছিল ৬১১ শতাংশ, সর্বনিম্ন শূন্য। বিডার সভায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতাসহ অর্থনীতি ও শিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন।


thebgbd.com/NIT