২০২৪ সালে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বেশিরভাগ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান, ইরাক এবং সৌদি আরব। লন্ডন থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
মানবাধিকার সংস্থাটি মৃত্যুদণ্ডের ওপর তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী মোট ১,৫১৮টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে ১,৬৩৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই পরিসংখ্যান ২০২৩ সালের তুলনায় মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি।
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনামে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হাজার হাজার লোককে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ড একটি জঘন্য অপরাধ যার বর্তমান বিশ্বে কোনো স্থান নেই।’
বেসরকারি সংস্থাটি দেখেছে, টানা দ্বিতীয় বছরের মতো নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশগুলোর সংখ্যা রেকর্ডতম ১৫টি। এতে বলা হয়েছে, গত বছর ৯১ শতাংশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান, ইরাক এবং সৌদি আরব। তিনটি দেশেই মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী এই বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। ক্যালামার্ড আরও বলেছেন, জানামতে মৃত্যুদণ্ডের ৬৪ শতাংশ ঘটেছে কেবল ইরানে, যেখানে কমপক্ষে ৯৭২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১শ’ জনেরও বেশি।
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, সৌদি আরব, যেখানে শিরশ্ছেদ করা হত। সেদেশে বার্ষিক মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১৭২ থেকে কমপক্ষে ৩৪৫জনে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ইরাক তাদের মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা প্রায় চারগুণ বাড়িয়ে কমপক্ষে ১৬ থেকে কমপক্ষে ৬৩ করেছে।
অধিকার গোষ্ঠীটি বলেছে, কিছু রাজ্য বিক্ষোভকারী এবং জাতিগত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে বলা হয়েছে, ইরান ২০২২ সালের ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার ‘অব্যাহত’ রেখেছে। এরমধ্যে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকও রয়েছে।
অ্যামনেস্টি আরো জানিয়েছে, সৌদি আরব রাজনৈতিক ভিন্নমতকে দমন করতে এবং শিয়া সংখ্যালঘুদের শাস্তি দিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর অব্যাহত রেখেছে। অ্যামনেস্টি আরো উল্লেখ করেছে, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের চেয়ে একজন বেশি।
অ্যামনেস্টি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ডের ৪০ শতাংশেরও বেশি মাদক-সম্পর্কিত অপরাধের জন্য কার্যকর করা হয়েছে উল্লেখ করে চীন, ইরান, সৌদি আরব এবং সিঙ্গাপুরের নাম প্রকাশ করেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, মানবিক আইন এই ধরনের মৃত্যুদণ্ডকে বেআইনি বলে মনে করে কারণ মাদক সংক্রান্ত অপরাধকে ‘সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ’ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়।
এনজিওটি সতর্ক করে দিয়েছে, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া এবং টোঙ্গা মাদক সম্পর্কিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড চালু করার কথা বিবেচনা করছে। এতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং বুরকিনা ফাসো সাধারণ অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীর মতে, বর্তমানে ১৪৫টি দেশ মৃত্যুদণ্ডকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড