বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আব্দুল জব্বার নামে এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে তুরিন আফরোজকে আদালতে হাজির করে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর দুপুর ২ টা ৩৪ মিনিটে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ আসামিকে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক সুমন মিয়া।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের জোর দাবি জানান। এ সময় তুরিন আফরোজের মনোনীত কোনো আইনজীবী ছিলে না। তাই বিচারক আসামিকেই তার পক্ষে কথা বলতে বলেন।
এ সময় তুরিন আফরোজ বলেন, ‘গত চার বছর ধরে আমি মিডিয়াতে কোনো কিছুই বলিনি, কিছু লিখিনি। বলা হচ্ছে, আমি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সাপোর্ট করলাম। আবার তার আমলেই আমি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ৬ বছর ধরে চাকরি থেকে বঞ্চিত। বুঝলাম না আমি কোন পক্ষের লোক।’
সোমবার রাতে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক সুমন মিয়া।
দুপুর ১টার দিকে তুরিন আফরোজকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে তাকে আদালতের এজলাসে ওঠানো হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায় তুরিন আফরোজকে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে গেছে।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, তুরিন আফরোজ আলোচিত, বিতর্কিত মানুষ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে হাসিনার পক্ষে মিডিয়াতে তুমুল বক্তব্য দিতেন। হাসিনাকে সমর্থন করে বিরোধীদের আন্দোলন সংগ্রামের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতেন। ফ্যাসিজম রক্ষার জন্য বক্তব্য রাখতে সহযোগিতা করতেন। সুপ্রিম কোর্টে যেসব আইনজীবীর সহযোগিতায় একটি কলোনি তৈরিতে সহায়তা, আজ্ঞাবহ কাজ করতো তাদের একজন তুরিন আফরোজ। তার এ ধরনের বক্তব্য রাখার এবং সহযোগিতার দুইটি উদ্দেশ্য ছিল। এক হলো-হাসিনার আনুকূল্য লাভ করে বড় পদ পাওয়া। আরেকটি হলো পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে মা, ভাইকে বঞ্চিত করে দখলে রাখা।
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী আরও বলেন, প্রথমটা অর্জন করেছিলেন, ন্যক্কারজনক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয়েছিল। পুরস্কারস্বরূপ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগ হওয়ার পর যারা আসামিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য ও তাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। পরে আবার আসামিদের পক্ষে গিয়ে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে প্রসিকিউটর পদ থেকে অব্যাহতি পান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে মা, ভাইকে বঞ্চিত করে এককভাবে দখলে নেন।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকা পালন করায় নীলফাসারী জলঢাকায়ও হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। মামলা হলেই কিন্তু সব আসামিকে ধরা হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, মিটিং হয়েছে। হাসিনা তাদের ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। তারা জয় বাংলা ব্রিগেড তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল, সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছেন। এসব করছে যারা বিদেশে পালিয়ে গেছে এবং দেশে যারা অবস্থান করছে। হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তুরিন আফরোজ এর সাথে সম্পৃক্ত। তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়। বিভিন্ন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাচেষ্টা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষ আদালত তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
thebgbd.com/NIT