কিডনি শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি বের করতে সাহায্য করে।কিডনি নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদী সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার অনুপস্থিতি, এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবারের অতিরিক্ত খাওয়া।কিছু খাবার ও পানীয় কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষত যখন এগুলি অতিরিক্ত পরিমাণে বা নিয়মিত খাওয়া হয়।
নিচে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলি কিডনির ক্ষতি করতে পারে:
১. বেশি পরিমাণে লবণ (সোডিয়াম)
লবণ অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। কিডনি অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য হয়, ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। উচ্চ লবণযুক্ত খাবার যেমন:
প্রক্রিয়াজাত খাবার (চিপস, কুকিজ, স্ন্যাকস)
কনসার্ভড বা টিনজাত খাবার (বিনস, স্যুপ, খাবার)
ফাস্টফুড (বার্গার, পিৎজা)
২. চিনি এবং অতিরিক্ত মিষ্টি
কিডনি রোগের সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্পর্ক রয়েছে, এবং উচ্চ পরিমাণে চিনি খেলে রক্তে শর্করার স্তর বাড়তে পারে, যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত মিষ্টি খাবারের মধ্যে রয়েছে:
সোডা, সফট ড্রিংকস
প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি খাবার (কেক, কুকিজ, চকোলেট)
উচ্চ পরিমাণে মধু বা সিরাপ
৩. অত্যধিক প্রোটিন
অনেক প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (যেমন মাংস, মাছ, ডিম) বেশি পরিমাণে খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত যাদের আগে থেকেই কিডনি সমস্যা রয়েছে। প্রোটিনের অতিরিক্ত পরিমাণ কিডনির ফিল্টারিং প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এবং কিডনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৪. অ্যালকোহল
অ্যালকোহল অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা প্রভাবিত হতে পারে। অ্যালকোহল কিডনির জলীয় ভারসাম্য এবং টক্সিন বের করার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, এবং এটি কিডনির ক্ষতি ঘটাতে পারে।
৫. প্রক্রিয়াজাত খাবার (প্রসেসড ফুড)
প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো যেমন প্যাকেটজাত সস, টিনজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস (হটডগ, সসেজ) এবং ফাস্টফুডগুলো অনেকেই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। এসব খাবারে উচ্চ পরিমাণে লবণ, চিনির সাথে সাথে কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৬. ক্যাফেইন
ক্যাফেইন শরীরের জন্য উত্তেজক, যা কিডনির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। অতিরিক্ত কফি বা শক্তিশালী চা খাওয়ার কারণে কিডনির পানি শোষণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে, এবং কিডনি ডিহাইড্রেশন (অতিরিক্ত পানি হারানো) হতে পারে।
৭. ফসফেট যুক্ত খাবার
ফসফেটের অতিরিক্ত পরিমাণ কিডনি রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এটি কিডনি ফাংশনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং কিডনি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। কিছু খাবারে উচ্চ ফসফেট থাকে, যেমন:
প্রক্রিয়াজাত মাংস
কোমল পানীয় (সোডা)
কেক, বিস্কুট
৮. পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (খুব বেশি পরিমাণে)
পটাশিয়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ, তবে অতিরিক্ত পটাশিয়াম কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কিডনি যদি কার্যক্ষম না থাকে, তবে অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীরে জমা হতে পারে এবং এটি হৃদযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত পটাশিয়াম পাওয়া যায়:
কলা
টমেটো
আলু
কমলা
৯. হাইড্রেটেড না থাকা
পানি কম খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিডনি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। পানি কম খেলে কিডনি ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কিডনির সুরক্ষার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। লবণ, চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আনা উচিত। যদি কিডনির সমস্যা থাকে বা কিডনির প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে স্বাস্থ্যসচেতন খাদ্যাভ্যাস এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত।