ঢাকা | বঙ্গাব্দ

হাঙ্গেরিতে এলজিবিটিকিউ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ, নতুন সংবিধান সংশোধন পাস

জনসমক্ষে এলজিবিটিকিউ প্লাস গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান নিষিদ্ধে সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করল হাঙ্গেরি।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ এপ্রিল, ২০২৫
হাঙ্গেরিতে এলজিবিটিকিউ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ, নতুন সংবিধান সংশোধন পাস ছবি : সংগৃহীত।

জনসমক্ষে এলজিবিটিকিউ প্লাস গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান নিষিদ্ধে সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করল হাঙ্গেরি। আইনি বিশেষজ্ঞ ও সমালোচকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত জনপ্রিয়তাবাদী সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের আরেকটি নিদর্শন।


এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান ‘গৌরব পদযাত্রা বা প্রাইড প্যারেড’ নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী (এলজিবিটি) সংস্কৃতির উৎসব। অনেক সময় সমকামী বিবাহসহ অন্যান্য আইনগত ইস্যুকে তুলে ধরার জন্যও এই জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।


অধিকাংশ গৌরব পদযাত্রাই বার্ষিক অনুষ্ঠান। আধুনিক এলজিবিটি অধিকার আন্দোলনের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ‘স্টোনওয়াল বিদ্রোহের’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনেক গৌরব পদযাত্রার আয়োজন করা হয় জুন মাসে।


সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট গতকাল সোমবার এক সাংবিধানিক সংশোধনী পাশ করেছে, যার মাধ্যমে সরকার এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের জনসমক্ষে অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। এই সংশোধনীটি পাশের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন ছিল, ১৪০টি ভোট পক্ষে ও ২১টি ভোট বিপক্ষে যায়।


এটি প্রস্তাব করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান নেতৃত্বাধীন শাসক দল ফিদেজ-কেডিএনপি জোট।


ভোট গ্রহণের আগে বিরোধী দলীয় রাজনীতিক ও অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের একটি প্রবেশপথ অবরোধের চেষ্টা করেছিল। পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। অনেক বিক্ষোভকারী নিজেদের হাতে প্লাস্টিকের টাই বেঁধে একত্রিত হয়েছিলেন।


সংশোধনীতে বলা হয়েছে, শিশুদের নৈতিক, শারীরিক ও আত্মিক বিকাশের অধিকার জীবনের অধিকারের পর যে কোনো অধিকারের চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে, যার মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারও অন্তর্ভুক্ত। হাঙ্গেরির বিতর্কিত শিশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচের কিশোর-কিশোরীদের সামনে সমকামিতার উপস্থাপন বা প্রচার নিষিদ্ধ। 


ওই আইন অনুযায়ী, নিষিদ্ধ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করতে কর্তৃপক্ষ ফেশিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে, ২ লাখ হাঙ্গেরিয়ান ফোরিন্ট (প্রায় ৫৪৬ ডলার) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।


বিরোধী দল মোমেন্টাম পার্টির সংসদ সদস্য দাভিদ বেদো লেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে অরবান ও ফিদেজ গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন ভেঙে দিচ্ছে, গত দুই-তিন মাসে যা আরো দ্রুত হচ্ছে।

’ বিরোধী সংসদ সদস্যরা এয়ার হর্ন বাজিয়ে ভোট বিঘ্নিত করারও চেষ্টা করেন, তবে কয়েক মুহূর্ত পরেই ভোট আবার শুরু হয় ।


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাঙ্গেরির সরকার এলজিবিটিকিউ প্লাস গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং দেশের শিশু সুরক্ষা আইন মেনে চলার প্রতি জোর দিচ্ছে। সরকারের দাবি, শিশুদের ‘জেন্ডার উন্মাদনা’ থেকে রক্ষা করতে হবে।


এদিকে সমালোচকরা বলছেন, এইসব পদক্ষেপ শিশুদের সুরক্ষায় খুব একটা ভূমিকা রাখে না, বরং দেশের গুরুতর সমস্যাগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে এবং নির্বাচনের আগে অরবানের ডানপন্থী ভোটব্যাংক সক্রিয় করতে এই পদক্ষেপগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। 


হাঙ্গেরিয়ান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের আইনজীবী ড্যানেল ড্যাব্রেন্টে বলেন, ‘এটি নিছক প্রপাগান্ডা। সরকার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এর সঙ্গে শিশুদের অধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই।’


সংবিধানে স্বীকৃত দুটি লিঙ্গ


নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সংবিধান শুধু দুটি লিঙ্গ পুরুষ ও নারীকে স্বীকৃতি দেবে। এটি আগের একটি সংশোধনীর সম্প্রসারণ, সেখানে সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের দত্তক গ্রহণ নিষিদ্ধ। তাতে বলা হয়েছে, ‘দত্তকের ক্ষেত্রে মা একজন নারী এবং পিতা একজন পুরুষ।’


এই ঘোষণার মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের লিঙ্গ পরিচয়কে সাংবিধানিকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে, যাদের জন্মগত যৌন বৈশিষ্ট্য পুরুষ ও নারীর প্রচলিত ধারণার সঙ্গে মেলে না।


বিক্ষোভকারীদের শনাক্তে ফেশিয়াল রিকগনিশন


হাঙ্গেরিয়ান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের আইনজীবী আদাম রেমপোর্ট বলেন, হাঙ্গেরি ২০১৫ সাল থেকে পুলিশি তদন্ত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজার কাজে ফেশিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু প্রাইড নিষিদ্ধের আইনটি এই প্রযুক্তিকে আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে।


তিনি আরো বলছেন, প্রযুক্তির সবচেয়ে মৌলিক সমস্যা হলো হস্তক্ষেপের মাত্রা। একটি জনসমাবেশে যখন এটি প্রয়োগ করা হবে তখন, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বিশাল প্রভাব পড়বে।


নাগরিকত্ব স্থগিতের বিধান


সোমবার পাশ হওয়া সংশোধনটিতে আরো একটি বিধান সংযোজন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইউরোপিয়ান ইকোনমিক অঞ্চলের বাইরের কোনো দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বধারী হাঙ্গেরির নাগরিক যদি জনশৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়, তবে তাদের নাগরিকত্ব ১০ বছর পর্যন্ত স্থগিত করা হতে পারে।


সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাঙ্গেরি জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের যুক্তি, বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য এমন পদক্ষেপ প্রয়োজন।


সূত্র : সিএনএন



thebgbd.com/NA