আলোচিত ওডেব্রেচট দুর্নীতিকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে পেরুর একটি আদালত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ওলান্তা হুমালা এবং তাঁর স্ত্রী নাদিন হেরেদিয়াকে মঙ্গলবার ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। লিমা থেকে এএফপি জানায়, ৬২ বছর বয়সী হুমালা এবং তার স্ত্রীকে দুইটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় ব্রাজিলের ওডেব্রেচট কোম্পানি ও ভেনেজুয়েলার সরকারের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষ থেকেই হুমালাকে আটক করা হয়। বিচারক নাইকো করোনাদো অনুপস্থিত হেরেদিয়ার গ্রেফতারেরও নির্দেশ দেন। পরে হেরেদিয়া লিমায় অবস্থিত ব্রাজিল দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে থাকা সাবেক সেনা কর্মকর্তা হুমালা ২০২২ সালে ওদেব্রেশ দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত প্রথম সাবেক পেরুভিয়ান প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিচারের মুখোমুখি হন। এ কেলেঙ্কারিতে আরও তিনজন সাবেক প্রেসিডেন্টের নাম জড়িয়েছে।
২০১৯ সালে পুলিশ দুইবারের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্সিয়াকে তার বাড়িতে গ্রেপ্তার করতে গেলে তিনি আত্মহত্যা করেন। অপরদিকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা আলেহান্দ্রো টোলেডো গত বছর সরকারি চুক্তির বিনিময়ে কোটি কোটি ডলার ঘুষ গ্রহণের দায়ে ২০ বছরেরও বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। চতুর্থ অভিযুক্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পাবলো কুচিনস্কির (২০১৬ু২০১৮ মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান) বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলমান।
প্রসিকিউটররা হুমালার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের নির্বাচনে ওডেব্রেচটের দেওয়া ৩০ লাখ ডলার অবৈধ অর্থ গ্রহণের অভিযোগে ২০ বছরের এবং হেরেদিয়ার বিরুদ্ধে ২৬ বছরের কারাদণ্ড দাবি করেন। ওডেব্রেচটকে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক ঘুষ কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী করা হয়।
ঘুষের বিনিময়ে প্রভাব বিস্তার
হুমালা ও হেরেদিয়ার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, ২০০৬ সালের ব্যর্থ নির্বাচনী প্রচারণায় প্রয়াত ভেনেজুয়েলীয় প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের পাঠানো প্রায় দুই লাখ ডলার অবৈধভাবে ব্যবহার করেছেন তারা। এছাড়া হেরেদিয়ার বিরুদ্ধে ওই অর্থের একটি অংশ দিয়ে সম্পত্তি ক্রয়ের তথ্য গোপনেরও অভিযোগ আনা হয়। তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। হুমালার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে, হেরেদিয়া তাদের লিমা দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন এবং এই পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশ ‘নিয়মিত যোগাযোগে’ রয়েছে।
২০১৬ সালে ওদেব্রেশ স্বীকার করে যে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তারা পেরুর কর্মকর্তাদের অন্তত ২৯ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছে এবং ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে সম্মত হয়। বামপন্থী হুমালা ২০১১ সালে ডানপন্থী কেকো ফুজিমোরিকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কেকো নিজেও ওডেব্রেচট সম্পর্কিত একটি মামলায় ১৬ মাস প্রাক-বিচার হেফাজতে ছিলেন।
সূত্র: এএফপি
এসজেড