ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে অতিরিক্ততা বা বাড়াবাড়ির কোনো স্থান নেই। কোরআন ও হাদীস বারবার সতর্ক করেছে ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ি বা ‘গুলু’ (অতিনিষ্ঠা) থেকে বিরত থাকতে। অতিমাত্রায় কঠোরতা বা নিজের ইচ্ছেমতো ধর্ম পালনের চেষ্টার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, তার বহু উদাহরণ রয়েছে ইতিহাসে।
কোরআনে সতর্কবার্তা
“হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের ধর্মে বাড়াবাড়ি করোনা এবং আল্লাহর ব্যাপারে সত্য ছাড়া কিছু বলো না।” (সূরা নিসা: ১৭১)
এই আয়াতে খ্রিষ্টানদের উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, তারা ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র বা ঈশ্বররূপে মানার মাধ্যমে ধর্মে সীমা লঙ্ঘন করেছে।
রাসূল (সা.)-এর হুঁশিয়ারি
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তোমরা ধর্মে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকো, কারণ তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধর্মে বাড়াবাড়ি করেই ধ্বংস হয়েছে।” (নাসাঈ: ৩০৫৭)
একবার তিনজন সাহাবি ধর্মে অতিরিক্ত কঠোরতা প্রদর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। একজন বললেন, “আমি সারাজীবন রোজা রাখব”, অন্যজন বললেন, “আমি রাতভর নামাজ পড়ব, ঘুমাবো না”, তৃতীয়জন বললেন, “আমি বিয়ে করবো না”।
রাসূল (সা.) তাদের বললেন, “আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি ও তাকওয়ায় অগ্রগামী। কিন্তু আমি রোজা রাখি ও ভাঙ্গি, নামাজ পড়ি ও ঘুমাই, বিয়েও করি। যে আমার সুন্নত ত্যাগ করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী: ৫০৬৩)
ইসলামের দৃষ্টিতে ভারসাম্যপূর্ণ ধর্মচর্চা
ইসলাম ‘মিতব্যয়ী ও ভারসাম্যপূর্ণ পথের’ ধর্ম। ইসলাম কঠোর সন্ন্যাসবাদের বিরোধী। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।” (সূরা বাকারা: ১৮৫)
আরও বলা হয়েছে, “এবং আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী (উম্মতান ওয়াসাতা) জাতি বানিয়েছি।” (সূরা বাকারা: ১৪৩)
বাড়াবাড়ির বাস্তব পরিণতি
১. আত্ম অহংকারে পতন: বাড়াবাড়ি মানুষকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবতে শেখায়, যা অহংকার ও গোমরাহির দিকে নিয়ে যায়।
২. দেহ-মন ক্লান্তি: সীমার অতিরিক্ত ইবাদত বা কষ্টসাধ্য কাজ শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যে ক্ষতি ডেকে আনে।
৩. পরিবার-সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা: ভারসাম্যহীন ধর্মচর্চা ব্যক্তি ও সমাজে দূরত্ব তৈরি করে।
৪. সুন্নতের বিপরীত অবস্থান: নিজস্ব ‘ধার্মিকতা’ দেখাতে গিয়ে অনেক সময় রাসূল (সা.)-এর সুন্নত উপেক্ষিত হয়।
ধর্ম পালন শ্রেষ্ঠ ইবাদত, কিন্তু সীমার অতিরিক্ত বা মনগড়া উপায়ে তা পালন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। ইসলাম চায় সহজতা, ভারসাম্য ও নীতিনির্ভরতা। তাই ধর্মে বাড়াবাড়ি নয়— বরং যথাযথভাবে, রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথে থেকে ইবাদত করাই হলো প্রকৃত ইসলামী জীবনযাত্রা।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং অতিরিক্ততার পথ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
thebgbd.com/NA