ঢাকা | বঙ্গাব্দ

যুদ্ধবিরতিতে পরস্পর দোষারোপ

ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ বন্ধে দুই পক্ষ যদি সমঝোতার দিকে এগিয়ে না যায়, তাহলে এই যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রচেষ্টা থেকে সরে আসবে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২১ এপ্রিল, ২০২৫
যুদ্ধবিরতিতে পরস্পর দোষারোপ ইউক্রেন।

রোববার ইস্টার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহেই যুদ্ধরত দুই দেশ একটি ‘সমঝোতায়’ পৌঁছাতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ইউক্রেনের ক্রামাতোরস্ক থেকে এএফপি জানায়, ধর্মীয় এই উৎসবকে ঘিরে শনিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া এ সময় শত শত হামলা চালিয়েছে।


জেলেনস্কি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের পুরোপুরি প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করেছে এবং করে যাবে।’ পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘পুতিনের ঘোষিত যুদ্ধবিরতি রুশ সেনারা ২ হাজারের বেশি বার লঙ্ঘন করেছে।’ তিনি আরও জানান, ‘আজ অবশ্য কোনও বিমান হামলার সতর্কতা শোনা যায়নি।’ এ অবস্থায় তিনি অন্তত ৩০ দিনের জন্য বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর দূরপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন।


পুতিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পরই একই ধরনের প্রস্তাব দেন জেলেনস্কি। ট্রাম্পও রাশিয়াকে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, যা ইউক্রেন মেনে নিলেও রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করে। শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ বন্ধে দুই পক্ষ যদি সমঝোতার দিকে এগিয়ে না যায়, তাহলে এই যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রচেষ্টা থেকে সরে আসবে।


‘সম্ভবত এবার একটি সমঝোতা’


রোববার ট্রাম্প আবারও একটি অপ্রত্যাশিত বার্তা দিয়ে বলেন, ‘আশা করছি রাশিয়া ও ইউক্রেন এই সপ্তাহেই একটি সমঝোতায় পৌঁছবে।’ নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া বার্তায় তিনি আরও লিখেছেন, ‘এরপর তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য শুরু করবে, যা এখন সমৃদ্ধির পথে, এবং এতে তারা বিপুল অর্থ উপার্জন করতে পারবে।’


তবে হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের এই ঘোষণার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। রাশিয়া যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে ‘কঠিন’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা অভিযোগ তোলে যে, ইউক্রেনই যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে। মস্কো দাবি করে, তারা ইউক্রেনীয় হামলা প্রতিহত করেছে এবং কিয়েভ শত শত ড্রোন ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছে, যা বেসামরিক হতাহতের কারণ হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ‘ইস্টারের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও ইউক্রেনীয় বাহিনী রাতে দোনেৎস্ক অঞ্চলে রুশ অবস্থানে হামলার চেষ্টা করেছে।’ 


পুতিনের ঘোষণার ভিত্তিতে রুশ সেনারা যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে পালন করেছে বলেও দাবি করেছে মস্কো। পূর্বাঞ্চলীয় শহর কোস্তান্তিনিভকায় উদ্ধারকর্মীরা জানায়, আগের দিন রুশ গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে তারা এক নারী ও এক পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করেছে। গোরলোভকার রুশ-নিয়ন্ত্রিত মেয়র ইভান প্রিখোদকো জানান, গোলাগুলিতে সেখানে দুই বেসামরিক আহত হয়েছেন।


‘আজ কম সেনা মারা যাবে’


এএফপিকে ইউক্রেনীয় সেনারা জানান, তারা সংঘর্ষে কিছুটা বিরতি লক্ষ করেছেন। দক্ষিণের জাপোরিঝিয়া ও উত্তর-পূর্বের খারকিভ অঞ্চলে রুশ সেনাদের সামরিক তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে জানান এক ড্রোন ইউনিট কমান্ডার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি হামলা হয়েছে ঠিকই, তবে তা ছিল বিচ্ছিন্নভাবে ছোট ছোট দল দ্বারা চালানো।’ তিনি বলেন, ‘আজ কিছু হলেও কম সেনা মরবে।’


রুশ গোলন্দাজ ইউনিটের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সুমি সীমান্ত অঞ্চলে লড়াইরত ইউক্রেনীয় জুনিয়র লেফটেন্যান্ট সার্গেই এএফপিকে বলেন, ‘রুশ গোলাবর্ষণ বন্ধ রয়েছে। এটা সাধারণ দিনের তুলনায় অনেক শান্ত।’ তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা এখন প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে। ‘শত্রুপক্ষ যদি অগ্রসর না হয়, তবে গুলিও ছোড়া হয় না।’ পূর্ব ইউক্রেনে অবস্থানরত এএফপি’র সাংবাদিকেরা স্বাভাবিক দিনের তুলনায় কম বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং আকাশে ধোঁয়ার রেখাও দেখা যায়নি।


পুতিন শনিবার সন্ধ্যা ৬টা (গ্রিনিচ সময় ১৫০০টা) থেকে রোববার রাত ১২টা (গ্রিনিচ সময় ২১টা) পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মানবিক কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জবাবে জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনও যুদ্ধবিরতিতে প্রস্তুত এবং তিনি ৩০ দিনের জন্য এই বিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব দেন—শান্তির জন্য একটি সুযোগ দেওয়ার আহ্বানে। তবে রোববার জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া এখনও তার প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর কোনও নির্দেশ দেননি।


‘রাশিয়ার ওপর ভরসা করা যায় না’ 


কিয়েভে ইস্টার সানডের ঘন্টাধ্বনির মাঝেও রাশিয়ার সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। ৩৮ বছর বয়সী বিপণনকর্মী ওলগা গ্রাচোভা বলেন, ‘ওরা এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আজ রাশিয়ার ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না।’ ৪১ বছর বয়সী চিকিৎসক নাটালিয়া বলেন, ‘আমরা যাই প্রস্তাব দিই না কেন, তা থেকে যায় একতরফা প্রস্তাব হিসেবেই। কেউ সাড়া দেয় না।’


এদিকে মস্কোর বাসিন্দারা ইস্টারের যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং যুদ্ধ শেষের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ৩৪ বছর বয়সী গৃহিণী স্ভেতলানা বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখেছি ইস্টারের আগেই শান্তি ফিরে আসবে। আশা করি সেটা খুব তাড়াতাড়িই আসবে।’ ৭৩ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ইরিনা ভলকোভা বলেন, ‘আমাদের জন্য ইউক্রেনে পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না। মানুষ মরছে, আমাদের সেনারা মরছে।’


সূত্র: এএফপি


এসজেড