ছাত্র-জনতার ২৪এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যে সক্ষম ব্যক্তিদের সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও ঠিক কীভাবে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি তারা।
আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরিতে অগ্রাধিকারের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। ফলে বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যে এর কোনো বাস্তবায়ন হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, সরকারি চাকরিতে কাউকে অগ্রাধিকার দিতে হলে তা আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়েই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইন, বিধি, পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন জারি না করে কাউকে সুবিধাটি দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার সেই পথে না গেলে অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্য চাকরিতে কোটা পদ্ধতি চালু করতে হবে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়ার দাবি, গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে গেলে পৃথকভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়োগবিধিও সংশোধন করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, একেকটি সরকারি দপ্তরে আলাদা আলাদা নিয়োগবিধি। ফলে কোনো দপ্তরে কাউকে নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট বিধি পরিবর্তন করতে হবে। কারণ প্রজ্ঞাপন দিয়ে বিধি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। একটি আদেশের বলে তাদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দিলে ভবিষ্যতে তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। কোটাবিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে ২৩ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে ৯৩ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা। বাকি ৭ শতাংশ পদে কারা নিয়োগ পাবে প্রজ্ঞাপনে তা বলে দেওয়া হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যদের সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার প্রদানের প্রসঙ্গে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল বলেছিলেন, আমরা এ ধরনের কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি অধিশাখার মাধ্যমে বিধিবিধানসংক্রান্ত কাজগুলো করা হয়। অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে বিধি অধিশাখার কোনো শাখায় কোনো নির্দেশনা নেই বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তারা।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
কীভাবে তাদের এই সুবিধা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে ওই দিন কিছু বলেননি প্রেস সচিব শফিকুল আলম। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
কোটা পদ্ধতি চালু, নতুন প্রজ্ঞাপন জারি বা বিধি সংশোধন না করে গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না সেই প্রশ্নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার চাইলে আলাদা গাইডলাইন তৈরি করে সব ধরনের চাকরিতে তাদের অগ্রাধিকার দিতে পারে। কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকার কোনো নির্দেশনা দিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করব। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সরকারি চাকরিতে সুবিধা দিতে হলে তাদের জন্য কোটা রাখতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে কোটা রেখেছিল সরকার। পরে এ নিয়ে সমালোচনার পর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রতি শ্রেণিতে একটি করে আসন বেশি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ দিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, শহীদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনের প্রক্রিয়া শেষের দিকে রয়েছে।
এই অধিদপ্তরের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা, নিহতদের পরিবার ও আহতদের এককালীন বা মাসিক অনুদান, পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কীভাবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে সে বিষয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনের খসড়ায় কিছু বলা হয়নি।
খসড়া অনুযায়ী- জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের তালিকা ও ডেটাবেইস সংরক্ষণ, তাদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, শহীদ ও আহতদের তালিকা গেজেটে প্রকাশ করে সংরক্ষণ, গণকবর সংরক্ষণ ও স্মৃতিফলক স্থাপন, গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গবেষণা নীতি প্রণয়ন, ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ পালন এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। এই অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল বিলুপ্ত হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের কীভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, অধিদপ্তর স্থাপনের পর তা বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।
সূত্র: আজকের পত্রিকা
thebgbd.com/NA