ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শৈশবের ‘দুষ্টু’, পরিণত পোপ

সাধু হতে অনিচ্ছুক এই পোপের অমায়িকতা সত্ত্বেও ফ্লোরেস পাড়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তাকে ঘিরে নানা স্মারক।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২২ এপ্রিল, ২০২৫
শৈশবের ‘দুষ্টু’, পরিণত পোপ ‘বারিও দে ফ্লোরেস মিউজিয়াম’-এ সংরক্ষিত পোপের স্মারক।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ধর্মীয় শিক্ষা শুরু হয় যে স্কুলে, সেই বুয়েনস আইরেসের নুয়েস্ত্রা সেনিওরা দে লা মিসেরিকোর্দিয়া স্কুলের সন্ন্যাসিনীরা এখনো মনে রেখেছেন সেই চঞ্চল ছেলেটিকে—জর্জ মারিও বেরগোলিও, যিনি পরবর্তীতে হয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।বুয়েনস আইরেস থেকে এএফপি জানায়, স্কুলের উঠোন জুড়ে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলা, মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে ছুটে চলা—সেই ছোট্ট ছেলেটির দুষ্টুমির স্মৃতি যেন আজও জেগে আছে স্কুলের দেয়ালে।


শিক্ষিকা তেরেসা রোভিরা জানান, ‘শোনা যায়, সে ছিল বেশ দুষ্ট প্রকৃতির।’ হেসে বলেন, ‘কেউই সাধু হয়ে জন্মায় না, সাধু হয়ে ওঠে।’ যদিও রোভিরা তখন নিজেও শিশু, কিন্তু স্কুলের বয়োজ্যেষ্ঠ সন্ন্যাসিনীদের মুখে শুনেছেন পোপের শৈশবের নানা গল্প। সেই দুষ্ট ছেলেটিই একদিন হয়ে ওঠেন ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ নেতা। ১২ বছর পোপ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে সোমবার, ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।


শিকড়ের টানে ফ্লোরেস


মিসেরিকোর্দিয়া স্কুলটি অবস্থিত আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের ফ্লোরেস পাড়ায়—সেখানেই ফ্রান্সিসের জন্ম, সেখানেই ঈশ্বর, গরিব, ফুটবল ও ট্যাঙ্গোর প্রতি তার ভালোবাসার সূচনা। যদিও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা তিনি পেয়েছেন শহরের অন্য স্কুলে, মিসেরিকোর্দিয়াতেই তার প্রথম ধর্মীয় রীতি—ফার্স্ট কমিউনিয়ন ও কনফারমেশন—অনুষ্ঠিত হয়। এখান থেকেই শুরু হয় তার ধর্মের পথে যাত্রা।


সাধু হতে অনিচ্ছুক এই পোপের অমায়িকতা সত্ত্বেও ফ্লোরেস পাড়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তাকে ঘিরে নানা স্মারক। রাজধানীর অন্যতম দরিদ্র এলাকা হওয়া সত্ত্বেও, পাড়াবাসীদের গর্ব ফ্রান্সিস। সোমবার ফ্লোরেসের ঐতিহাসিক বাসিলিকায় ভিড় করেন শত শত শোকাহত মানুষ। সেখানেই ১৭ বছর বয়সী বেরগোলিও প্রথম পাদ্রি হওয়ার ডাক পান বলে একটি কাঠের প্রার্থনাচেয়ারে খোদাই করে লেখা রয়েছে। পাশের ‘বারিও দে ফ্লোরেস মিউজিয়াম’-এ সংরক্ষিত আছে পোপের বিভিন্ন স্মারক, যার মধ্যে রয়েছে তার হাতে লেখা একটি চিঠি, যেখানে তিনি ফ্লোরেসকে বলেন—‘আমার মহল্লা, আমার শিকড়।’


ফুটবল, পাস্তা আর সন্ন্যাসিনীদের রান্নাঘর


ফ্লোরেসেই অবস্থিত সান লোরেনসো ফুটবল ক্লাবের স্টেডিয়াম, যেটি প্রতিষ্ঠা করেন এক পাদ্রি ১৯০৮ সালে। সেই ক্লাবের সবচেয়ে বিখ্যাত ভক্ত ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। চলতি বছর শুরু হতে যাচ্ছে ক্লাবটির নতুন স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ, যা পোপের নামে নামকরণ করা হবে। মিসেরিকোর্দিয়ার ছোট্ট কাচের চ্যাপেলেই প্রথম মেস পরিচালনা করেন বেরগোলিও। ২০২৩ সালে আর্জেন্টিনা ত্যাগের আগে এখানেই পরিচালনা করেন শেষ দিককার একটি মেস।


তেরেসা রোভিরা বলেন, ‘ফ্লোরেসে ভাইকার থাকার সময় প্রতি বছর ৮ অক্টোবর—যেদিন তিনি প্রথম কমিউনিয়ন নেন—স্কুলে এসে মেস পরিচালনা করতেন।’ আর্চবিশপ হওয়ার পরও তিনি মাঝেমধ্যে স্কুলে আসতেন রোববারের দুপুরে, সন্ন্যাসিনীদের সঙ্গে পাস্তা খেতে। কখনো আবার রান্নাঘরে চুপিচুপি ঢুকে পড়তেন। বলতেন, ‘পোরোতা, ছোট ছোট সিস্টারদের বলো না, যে এসে গেছি, আগে চা খাই, তবে নিজেই বানাব’,—স্মরণ করেন রোভিরা।


সেন্ট্রাল প্লাজা দে মায়োর ক্যাথেড্রাল থেকে মেট্রো বা বাসেই যাতায়াত করতেন, হাঁটুর সমস্যা সত্ত্বেও কখনো ট্যাক্সি নিতেন না। একগুঁয়ে হলেও ছিলেন অত্যন্ত সরল।


বিদায়ের সাদামাটা গল্প


সোমবার সেই কনফেশনাল ঘরে দীর্ঘ লাইন পড়ে, যেখানে বলা হয়, বেরগোলিও প্রথম ঈশ্বরের ডাকে সাড়া পেয়েছিলেন। বাইরে মানুষ নীরবে প্রার্থনা করে, আর হকাররা বিক্রি করে প্লাস্টিক ফুল। রোভিরা শেষবারের মতো বলেন, ‘বারো বছর আগে তিনি আর্জেন্টিনা ছেড়েছেন একটি ছোট স্যুটকেসে সামান্য কাপড়চোপড় নিয়ে—ঠিক যেমনটা তিনি ছিলেন, তেমনই সরল।’


তিনি আর ফেরেননি।


সূত্র: এএফপি


এসজেড