২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার ভয়াবহ ঘটনায় নিহত হন ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক এবং আহত হন কয়েক হাজার। বিশ্বের ইতিহাসে এটি ছিল তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা, যা কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সেই ঘটনার ১২ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি বিচারকাজ।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার দীর্ঘসূত্রতার শিকার। ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল নির্ধারিত দিনে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৯ মে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, বারবার সমন জারি এবং পুলিশ পাঠিয়েও অনেক সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। তবে তারা আশা করছেন, অন্তত ১০০ জনের সাক্ষ্য পেলে মামলার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী সোহেল রানার পক্ষে দাবি করছেন, তিনি শুধু ভবনের জমির মালিক এবং তার বাবা-মায়ের নামে জমি থাকায় তাকে জামিন দেয়া উচিত। ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল হাইকোর্ট সোহেল রানাকে জামিন দিলেও পরবর্তীতে তা স্থগিত করে আপিল বিভাগ।
এই পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন রানা প্লাজার ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাদের পরিবার। শ্রমিক অধিকারকর্মীরা এই বিচারপ্রক্রিয়াকে উদাসীনতা ও অবহেলার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।
গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার বলেন, “বাংলাদেশে শ্রমিকদের শুধু উৎপাদনযন্ত্র হিসেবে দেখা হয়। তাদের স্বপ্ন, পরিবার বা মর্যাদার কোনো স্থান নেই মালিক ও রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে।”
ভবন ধসের আগের দিন (২৩ এপ্রিল) ফাটল দেখা দিলেও পরদিন শ্রমিকদের কাজে আসতে বাধ্য করা হয়। মাসের শেষ সপ্তাহ হওয়ায় বেতন আটকে রাখার হুমকি ছিল বড় একটি চাপ। এই নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত ঘটনার পরিণতিকে করে তোলে ভয়াবহ।
বিশ্বের অন্যতম শিল্প দুর্যোগ হিসেবে রানা প্লাজা ধস ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে, কিন্তু ১২ বছর পরও বিচার অসম্পূর্ণ থাকায় তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে আরও গভীর হতাশা।
দ্রুত ও কার্যকর বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন শ্রমিক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা—যেন এই বিপর্যয়ের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে।
thebgbd.com/NIT