যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির প্রভাবকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মঙ্গলবার চলতি বছরের পূর্বাভাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কমিয়েছে এবং বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতায় ঝুঁকি বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে। আইএমএফ-এর নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ২.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, যা জানুয়ারি মাসের 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক' (ডব্লিউইও) থেকে ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট কম।
ডব্লিউইও’র এ প্রতিবেদনটি বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর বসন্তকালীন সভার প্রাক্কালে তাদের সদরদপ্তরে প্রকাশ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, আগামী বছর এ হার ৩.০ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা চলতি বছরের জানুয়ারির তুলনায় ০.৩ শতাংশ পয়েন্ট কম।
আইএমএফ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের অলিভিয়ার গৌরিনচাস মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা এক নতুন যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে গত ৮০ বছর ধরে চালু থাকা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো নতুন করে রূপ নিচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, নতুন শুল্ক ঘোষণার ফলে এই বছরের বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদি বাণিজ্যিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকে, তবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পাবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি বাস্তবায়নের ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করায় আইএমএফ এ রিপোর্ট তৈরির জন্য ৪ এপ্রিলকে কাট অফ ডেট নির্ধারণ করেছে। ফলে, চীনের উপর সর্বশেষ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিফলন এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদি এই নতুন নীতিগুলো স্থায়ী ও কার্যকর থাকে, তবে তা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে আরও ধীর করতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
একই দিনে প্রকাশিত আইএমএফ-এর 'গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট' সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ট্রাম্পের স্টপ-স্টার্ট শুল্ক প্রবর্তনের ফলে আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কঠোর বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির কারণে ঘটেছে।
ডব্লিউইও প্রতিবেদনে আইএমএফ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে বৃদ্ধির ১.৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, যা জানুয়ারির তুলনায় ০.৯ শতাংশ কম। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটির প্রবৃদ্ধি ২০২৬ সালে আরও কমে ১.৭ শতাংশে দাঁড়াবে বলে মনে করছে আইএমএফ। এই ধীরগতির জন্য "নীতি অনিশ্চয়তা, বাণিজ্যিক উত্তেজনা এবং চাহিদা হ্রাস" কে দায়ী করা হয়েছে। আইএমএফ এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাস ৩.০ শতাংশ এবং পরবর্তী বছরে ২.৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকো, কানাডা ও চীন ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি দ্বারা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি এ বছর ৪.০ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন শুল্ক আরোপের প্রভাব মোকাবেলায় সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করতে না পারায় এটি কমে আসবে। গত বছর চীনের (২০২৪ সালে) প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.০ শতাংশ।
মেক্সিকান অর্থনীতি এখন এই বছর ০.৩ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা জানুয়ারি থেকে ১.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, অন্যদিকে কানাডার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসেও তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি জাপান, এই বছর মাত্র ০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং আগামী জানুয়ারি থেকে তা হ্রাস পাবে।
আইএমএফ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে প্রবৃদ্ধিতে শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব দেখছে। ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি এ বছর (২০২৫ সালে) ০.৮ শতাংশ এবং আগামী বছর (২০২৬ সালে) ১.২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
জার্মানির প্রবৃদ্ধি এ বছর শূন্য শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। পূর্বাভাসে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং ইতালির প্রবৃদ্ধিও হ্রাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বছর তাদের কোন প্রবৃদ্ধি হবে না বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে স্পেন ব্যতিক্রম হিসেবে উঠে এসেছে, পূর্বাভাসে যেখানে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধির বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
পূর্বাভাসে আইএমএফ মধ্যপ্রাচ্যের প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে হ্রাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এখনও আশা করছে যে ২০২৪ সালের তুলনায় অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে। কারণ, তেল উৎপাদন এবং জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার প্রবণতা এবং চলমান সংঘাতের প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে। সাব-সাহারান আফ্রিকায় এ বছর প্রবৃদ্ধি সামান্য কমে ৩.৮ শতাংশে নেমে আসবে, তবে আগামী বছর তা পুনরুদ্ধার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড