ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারত-পাকিস্তান বাড়ছে উত্তেজনা

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
ভারত-পাকিস্তান বাড়ছে উত্তেজনা উত্তেজনা বাড়ছে সীমান্তে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। দেশটি এই হামলার নেপথ্যে পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে। এরইমধ্যে কাশ্মীরে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন। সংগঠনটি পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। ধারণা করা হয়, টিআরএফ এর পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সমর্থন আছে।


কাশ্মীরে হামলার ঘটনার পর গতকাল বুধবার ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক সর্বো”চ কমিটি- ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিওরিটি বা সিসিএস বৈঠকে বসে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিআই এই খবর জানায়।


সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র জানান, বৈঠকে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সীমান্ত পারের যোগসাজস তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে সাফল্যের সঙ্গে নির্বাচন হওয়ার পরেই এই আক্রমণ হলো। এমন একটা সময়ে হামলা হলো যখন সেখানে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ।


বুধবার রাতে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে মিশ্র ঘোষণা করেন, সন্ত্রাসী হামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে নিচের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে:


১. ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি অবিলম্বে  স্থগিত করা হয়েছে যতক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং পাকাপাকিভাবে সীমান্ত পারের সন্ত্রাসের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে।


২. পাঞ্জাবে অবস্থিত সমন্বিত আটারি চেকপোস্ট অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই পথ দিয়ে যারা বৈধভাবে পারাপার করেছেন তারা পয়লা মে-র আগেই ফিরতে পারবেন।


৩. সার্ক দেশগুলোর জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্প’-এর অধীন বিশেষ ভিসা নিয়ে পাকিস্তানের নাগরিকরা ভারতে ভ্রমণ করতে পারবেন না। যে পাকিস্তানি নাগরিকদের আগেই ওই ভিসা দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা হলো। ওই বিশেষ ভিসা নিয়ে ইতোমধ্যেই ভারতে রয়েছেন যে পাকিস্তানের নাগরিকরা, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।


৪. দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে সেদেশের প্রতিরক্ষা, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর যে ‘পরামর্শদাতারা' রয়েছেন, তাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা, (অর্থাৎ অবাঞ্ছিত) বলে ঘোষণা করছে ভারত। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।


ভারতও ইসলামাবাদে তাদের দূতাবাস থেকে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর পরামর্শদাতাদের ফিরিয়ে আনবে। দুই দেশের দূতাবাসগুলোতে এই পদগুলো বিলুপ্ত করা হলো। দুই দেশের দূতাবাসেরই সামরিক পরামর্শদাতাদের পাঁচজন করে কর্মীকেও নিজের দেশে চলে যেতে হবে।


৫. দুই দেশের রাজধানীতে কর্মী সংখ্যা বর্তমানের ৫৫ থেকে কমিয়ে পয়লা মের মধ্যে ৩০ এ নিয়ে আসতে হবে।


এদিকে ভারতের এমন কড়া সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভারতের নেওয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ইসলামাবাদ।


এখন প্রশ্ন উঠেছে, কাশ্মীরে হামলা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কী যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজ’-এর (ক্লস) পরিচালক তারা কার্থা বলেছেন, এটি এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা। আমরা এটিকে সেভাবেই দেখছি। এমন এক সময় এটি ঘটল যখন কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বিতর্কিত একটি ভাষণ দেন।


ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করে আসা তারা কার্থা পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের গত ১৬ এপ্রিল দেওয়া এক বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা কার্থা উল্লেখ করেছেন যে আসিম মুনির ওই বক্তব্যে ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের অনুঘটক দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি আবারও সমর্থন জানিয়েছেন এবং মুসলমানদের ‘হিন্দুদের থেকে আলাদা পরিচয়’ এর কথা জোর দিয়ে বলেন।


ভারতীয় এই কর্মকর্তার মতে পেহেলগামে যা ঘটেছে, তা মুনিরের ওই বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের ধারার সঙ্গে মিলে যায়। এদিকে এরইমধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কাশ্মীর হামলার জবাবে পাল্টা জোরালো এবং স্পষ্ট জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ার বার্তা দিয়েছেন। মোদিও অঙ্গীকার করেছেন, এই হামলার জবাব দেওয়া হবে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক গার্ডিয়ানকে বলেছেন, পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘গলার শিরা’ হিসেবে উল্লেখ ও কাশ্মীরিদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে তাদের ত্যাগ না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এই হামলা হলো। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি লেখক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, এই অঞ্চলের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী একে অপরের দিকে ঠাউর হয়ে আছে।


গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে মোদির দ্রুত ভারতে চলে আসাও ইঙ্গিত দেয় যে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত সরকার। এ ছাড়া কাশ্মীরে এমন সময়ে হামলা হয়েছে যখন ভারতে অবস্থান করছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ-পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল।


এরই মধ্যে জেডি ভ্যান্স ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন এবং ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারের কথা বলেছেন।এ ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এই হামলার নিন্দা জানিয়ে মোদির পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।


সূত্র: পিটিআই


এসজেড