ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পাঁচ গুলিতে গুরুতর আহত স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী ‘শঙ্কামুক্ত’

তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত কয়েক মাসে নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য রাজনৈতিকভাবে বেশ বিতর্কিত হয়ে পড়েন রবার্ট ফিকো। গত জানুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন তিনি।
  • | ১৬ মে, ২০২৪
পাঁচ গুলিতে গুরুতর আহত স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী ‘শঙ্কামুক্ত’ ১৫ মে আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন রবার্ট ফিকো

স্লোভাকিয়ার হ্যান্ডলোভা শহরে আততায়ীর গুলিতে আহত দেশটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো এখন শঙ্কামুক্ত। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে বিবিসিকে স্লোভাক উপপ্রধানমন্ত্রী টমাস তারাবা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তারাবা বলেছেন, ‘ফিকোর অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি বেঁচে যাবেন বলেই ধারণা করছি।’

এর আগে, তিন ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারের পর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট কালিনাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ওই সময় চিকিৎসকরাও জানান ফিকোর অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’।

বুধবার (১৫ মে) আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন রবার্ট ফিকো। ঘটনার পর তাকে উদ্ধার করে বানস্কা বাইস্ত্রিকা শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, হামলার পর ঘটনাস্থল থেকেই আততায়ী সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রী ফিকোর গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন পার্লামেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান লুবস ব্লাহা।

তবে কারা এবং ঠিক কী কারণে ফিকোর ওপর হামলা চালানো হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে, সরকারি একটি বৈঠকে যোগ দিতে ৫৯ বছর বয়সী রবার্ট ফিকো বুধবার স্লোভাকিয়ার হ্যান্ডলোভা শহরে যান। শহরটি স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। স্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখান ফিকোকে দেখার জন্য তার দলের অসংখ্য নেতাকর্মী একত্রিত হয়। বৈঠক শেষে তিনি যখন জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ছিলেন, তখনই ফিকোকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।

হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাইরে বেশ কিছু মানুষ হামলাকারীকে ধরতে ছুটে যাচ্ছে।

তবে ভিডিওটি ওই ঘটনার কি না, সেটি বিবিসির পক্ষে যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।

হামলায় রবার্ট ফিকোর পেটে গুলি লেগেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।

ঘটনার পরপরই নিরাপত্তাকর্মীরা রবার্ট ফিকোকে ঘিরে ধরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন। কিন্তু ততক্ষণে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এরপর প্রধানমন্ত্রী ফিকোকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হওয়ায় তাকে বানস্কা বাইস্ত্রিকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে জানায় দেশটির সরকার।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তার অবস্থা বিবেচনা করে তাকে রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় না নিয়ে বানস্কা বাইস্ত্রিকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ ঘটনাস্থল থেকে ব্রাতিস্লাভার দূরত্ব অনেক বেশি।’

রবার্ট ফিকোর ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি বার্তায় জানানো হয়েছে যে, তার শারীরিক অবস্থা বেশ সঙ্কটজনক।

প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জুজানা কাপাটোভা। এই হামলাকে ‘জঘন্য ও বর্বর’ আখ্যা দিয়ে ফিকোর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন তিনি। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে, স্লোভাকিয়ায় মাটিতে এমন সহিংসতার কোনও স্থান নেই।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী গুলিবিদ্ধ হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

নেতা হিসেবে রবার্ট ফিকো স্লোভাকিয়ায় বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশটিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তার ‘বামপন্থী’ দল জয়লাভ করে। এর মাধ্যমে তৃতীয় মেয়াদে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন রবার্ট ফিকো। অনেকেই তাকে রুশপন্থী নেতা বললেও ফিকো সেটি স্বীকার করেন না। গত বছরের নির্বাচনের সময় তার দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালায় বলেও জানা যাচ্ছে।

তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত কয়েক মাসে নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য রাজনৈতিকভাবে বেশ বিতর্কিত হয়ে পড়েন রবার্ট ফিকো। গত জানুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি