ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক সময় নিজেকে ফকির বলে প্রচার করতেন।
আটবছর আগে ব্যাংক নোট বাতিলের সময় এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘বিরোধীরা ভয় পাচ্ছে তাদের অবৈধ কালো টাকা হারানোর। কিন্তু আমি তো ফকির, ঝোলা নিয়ে এসেছি আবার ঝোলা নিয়েই চলে যাব। আমার তো কিছুই নেই।
কিন্তু বুধবার (১৫ মে) নিজেরে সেই ঝোলাটি নির্বাচন কমিশনের সামনে উপুড় করেছেন নরেন্দ্র মোদি। হলফনামায় যা উল্লেখ করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে তিনি মোটেই ফকির নন। বরং তার সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। নিজের ব্যাংক হিসেবেই রয়েছে কোটি টাকা।
আগামী ১ জুন ভোটে বারাণসী থেকে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের নিজের যোগ্যতা, সম্পত্তি, আয়কর রিটার্ন, ঋণ (থাকলে) এবং অপরাধের ইতিহাসের (থাকলে) বিশদ হলফনামার মাধ্যমে জানাতে হয় কমিশনের কাছে।
সোমবার (১৩ মে) ভারতে লোকসভার চতুর্থ দফার ভোট চলাকালীন মোদিও নিজের হলফনামা জমা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। তাতেই প্রকাশ্যে এসেছে তার সম্পত্তির বিস্তারিত হিসাব। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
হলফনামায় মোদি জানিয়েছেন, তার বাড়ি-গাড়ি কিছুই নেই। যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন সরকারি বাংলোয় থেকেছেন। ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত নয়াদিল্লির ৭, লোক কল্যাণ মার্গের সরকারি বাসভবনে থাকেন।
যদিও মোদির ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের হলফনামা বলছে, গুজরাতের গান্ধীনগরে তার একটি বাড়ি ছিল। পাঁচ বছর আগে সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের সেই বাড়ির দাম ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। মোদি জানিয়েছিলেন, ওই বাড়ি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাননি। ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমমন্ত্রী হওয়ার পরে কিনেছিলেন।
কিন্তু ২০১৯ সালের হলফনামায় ওই বাড়ির উল্লেখ থাকলেও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ওই বাড়িটি তিনি বিক্রি করেছেন কি-না, তারও উল্লেখ নেই হলফনামায়।
২০১৯ সালের হলফনামা বলছে, মোদির মোট অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ১২০ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত হিসাবে স্টেট ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্টে রক্ষিত রয়েছে। মোদির সাম্প্রতিক হলফনামা বলছে, ৫ বছরে ওই অ্যাকাউন্টেই মোদির জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
৩১ মার্চ পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্কে মোদির একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৭৩ হাজার ৩০৪ টাকা। আরো একটি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৭০০০ টাকা এবং স্থায়ী আমানত হিসাবে রয়েছে ২ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ৩৩৮ টাকা।
২০১৯ সালের হলফনামা অনুযায়ী মোদির জীবনবিমার পলিসি ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৪৭ টাকার। এ ছাড়া তার নামে কেনা ছিল কিছু শেয়ারও। ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৬ টাকার ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট।
২০২৪ সালের হলফনামায় অবশ্য বিমা বা শেয়ারের কোনও উল্লেখ নেই। মোদির ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটের জমার অঙ্ক শুধু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১২ হাজার ৩৯৮ টাকা।
তবে মোদির ঘোষণা মতে তার আয়ের সূত্র দুটি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার বেতন এবং ব্যাঙ্কে জমা অর্থ থেকে আসা সুদ। মোদি হলফনামায় জানিয়েছেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষে ২৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮০ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি। ৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৭৯ টাকা আয়কর দিয়েছেন সেই উপার্জনের ভিত্তিতেই।
এ ছাড়া মোদির হাতে নগদ রয়েছে ৫২ হাজার ৯২০টাকা। ৪৫ গ্রাম ওজনের চারটি সোনার আংটিও রয়েছে। যার মূল্য ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫০ টাকা। সব মিলিয়ে ৩ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার ৮৮৯ টাকার সম্পত্তি রয়েছে মোদির।
কিছু স্থাবর সম্পত্তি ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। তবে দশ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকায় বেতনের টাকা সুদ মিলিয়ে অনেকটাই জমেছে। তবে হিসাব বলছে, ওই দুই ক্ষেত্র ছাড়াও কিছু টাকা এসেছে। হতে পারে সেটা অতীতের সম্পত্তি বা বিনিয়োগ থেকে এসেছে। তবে সব মিলিয়ে ৩ কোটি টাকার মালিককে কি কোনভাবে ‘ফকির’ বলা যায়!
তবে বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে মোদি এই অর্থেই ‘ফকির’ যে, তার আগে-পিছে কেউ নেই।