সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষেত্রে আসছে নতুন বিধিমালা। এটি চূড়ান্ত হলে এক কর্মস্থলে কেউ আর দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন না। এতে মাঠের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয়ে এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলা-উপজেলা প্রশাসনে বদলি করা যাবে।
নতুন বিধিমালা এরইমধ্যে কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য সচিবালয়ের কর্মচারীদের মতো নিয়োগবিধি প্রণয়নের প্রস্তাব ওঠে। পর্যায়ক্রমে এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ৩০ এপ্রিল আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে ওই কমিটিকে।
চলমান নিয়মে বর্তমানে ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি নিয়োগ বিধিমালা এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য রয়েছে পৃথক বিধিমালা। এ ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য প্রযোজ্য বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪ অনুসরণ করা হয়।
এই বিধিমালা অনুযায়ী, সচিবালয়ের কর্মচারীরা পদোন্নতির মাধ্যমে উপসচিব (পঞ্চম গ্রেড) পর্যন্ত যেতে পারেন। তবে ইউএনও, ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের পদোন্নতির সীমা সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (দশম গ্রেড) পদে নির্ধারিত।
যদি অভিন্ন (একীভূত) নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, তাহলে পদোন্নতির নিয়মও একই হয়ে যাবে, যা সংশ্লিষ্ট সব অফিসে সমতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
নতুন বিধিমালার বিষয়ে গণমাধ্যমকে কমিটির আহ্বায়ক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল বলেন, ‘সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য নতুন নিয়োগ বিধিমালা-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগির কমিটি বৈঠকে বসবে। আলোচনার পর বোঝা যাবে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। কেন এই বিধিমালা প্রয়োজন, সেটিও পর্যালোচনা করা হবে।’
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, মাঠ প্রশাসন থেকেও দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এটা করার। কারণ উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের ধরন একই। তাই এটিকে ভালো উদ্যোগ বলা যায়। তবে বিধিমালা চূড়ান্ত হলে বদলিসংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে জানা যাবে।
যদিও নতুন বিধিমালা নিয়ে বিরোধও রয়েছে খোদ সচিবালয়েই। সবমিলিয়ে সচিবালয়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন প্রায় ১৩ হাজার জন। নন-ক্যাডাররা (প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা এও এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বা পিও) পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী সচিব, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব হতে পারেন।
অনেকের অভিযোগ, প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাদের পদ দেওয়া হয় না। এজন্য ৫ আগস্টের পর আন্দোলনও করেন কর্মচারীরা। পরে কয়েক দফায় সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি হয় তাদের। এখন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে সহকারী সচিব ৩৫৬ জন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ৭৮ জন ও উপসচিব পদে ৯ জন কর্মরত। আরও বেশি পদ সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন চলছে।
এছাড়া সবমিলিয়ে ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে এও পদ আছে ৮৩১টি। এর মধ্যে কর্মরত ৪৭৫ জন। বাকি পদে পদোন্নতি ও নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত হলে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনে ব্রিটিশ আমল থেকে এও পদ থাকলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ২০১৯ সালে সংখ্যা বাড়ানো হয়। মাঠ পর্যায়ে সব মিলে এমন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন অন্তত ১৫ হাজার।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম বলেছেন, ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে কর্মচারীরা আন্দোলনে নামেন, সমস্যার সমাধান হলে কেউ আন্দোলন করবেন না। তাঁর অভিযোগ, অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালার উদ্যোগ মূলত আন্দোলন ঠেকাতে এবং বান্দরবানে পোস্টিংয়ের ভয় দেখানোর কৌশল। তিনি বলেন, কেন্দ্র ও মাঠ প্রশাসন এক করলে জটিলতা তৈরি হবে, যেমন সুপ্রিম কোর্ট বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাঠে বদলি করা হয় না।
thebgbd.com/NA