প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ শুক্রবার (১৭ মে)। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের (৪৩ বছর আগে) এদিনে বাংলাদেশে ফিরে হাল ধরেন দলের। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চার দশকের মধ্যে রেকর্ড পঞ্চমবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন দেশ সেবায়। এর মধ্যে অনেক রূপান্তর ঘটেছে দেশের, যার রূপকার তিনি, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা।
সামরিক শাসনের পর একই শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারত থেকে এসে ঢাকা বিমানবন্দরে জনতার মঞ্চে নামেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সপরিবারে পিতার মৃত্যুর পর ছয় বছরের নির্বাসনের অবসান। সেদিন লাখো জনতার স্রোত নিজ মাটিতে তাকে বরণ করে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায়।
বৈরী আবহাওয়ায় বইছিলো ঝড়; অঝোরে আকাশ কাঁদলো বৃষ্টি হয়ে, কাঁদলেন বঙ্গবন্ধুর হাসু, কাঁদলো লাখো মানুষ। ভয়হীন এক মিছিলের নগরী হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা।
বিমানবন্দর থেকে শম্বুক গতিতে খোলা গাড়িতে করে স্লোগানে স্লোগানে নেত্রীকে জনতা নিয়ে আসেন শেরে বাংলা নগরের মানিক মিয়া এভিনিউতে। এতেই যেন সব কালো মেঘ সরে গিয়ে উঁকি দেয় এক সোনানি আকাশ।
অশ্রুসিক্ত নয়নে লাখো জনতার কাছে আশ্রয় চাইলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বললেন, 'সব হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমার হারাবার কিছু নেই।'
হ্যাঁ, এরপর নেত্রী শুধু দেশের জন্য দেয়ার গল্প বুনে চলেছেন চার দশকের বেশি সময় ধরে। আন্দোলন, সংগ্রাম, আর মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে চলেছেন অবিরত।
দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগের হয়ে সরকার গঠন করলেন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ থেকে আবারো গণতন্ত্রের নতুন সংগ্রামে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বারবার, করেছেন কারাভোগ। দমেও যাননি, থেমেও থাকেননি। ঘুরে দাঁড়িয়ে আবারো সরকার গঠন করলেন ২০০৯ সালে। জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখালেন স্বপ্ন কন্যা। ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে স্বল্পোন্নত দেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, তারপর স্মার্ট বাংলাদেশ।
পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল -- একে একে সব স্বপ্ন বাস্তবায়নে মালা গেঁথে চলেছেন সোনার বাংলাকে গড়ে তুলতে। পাঁচ বারের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে বিশ্ব দরবারে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বাংলার হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা শেখ হাসিনা।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিনের স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যখন শেরে বাংলানগরে আসলাম তখন বৃষ্টিতে স্টেজ ভিজে গেছে। তারপরও তিনি দাঁড়ালেন। বক্তৃতা দিলেন। এরপর জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা হয়ে গেল নেত্রীর।’
তিনি বলেন, এতো বছর দেশ পরিচালনার মাধ্যমে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের নাম অনেক উজ্জ্বল করেছেন।
বোন শেখ রেহানা ও ছোট দুই সন্তানকে ভারতে রেখেই এসেছিলেন দেশে। এক হাতে নেতাকর্মীদের নিয়ে দল গুছিয়েছেন। দলের অনেকেই সেদিন ভাবতে পারেননি পিতার মতো এতো বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণে হাল ধরবেন বঙ্গবন্ধু তনয়া।
এ বিষয়ে রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, একটা দেশের শুধু সম্পদ থাকলে হয় না, সে সম্পদ ব্যবহার করে দেশ রূপান্তরের জন্য একটা নেতৃত্ব দরকার। সেটি শেখ হাসিনার মধ্যে ছিল বলেই তার নেতৃত্বে আজকে দেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
এ সময় দেশের আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশে আমলা থাকবে, এটা ছাড়া দেশ চলতে পারবে না। কিন্তু আমলাতন্ত্র একটা বড় সমস্যা। শেখ হাসিনাকে বুঝতে হবে, কে তার বন্ধু, আর কে শত্রু। কারা তার ভালো চায়, আর কারা নিজেদের স্বার্থে তার পাশে ঘুরাঘুরি করে।’
এ অধ্যাপকের প্রত্যাশা, শেখ হাসিনার হাত ধরেই সুশাসন ফিরে আসবে, দুর্নীতিমুক্ত হবে দেশ। আক্ষেপ ঘুচিয়ে সাম্যের বাংলাদেশের রূপকার হবেন তিনি।