ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পালিয়ে বিয়ের আগে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

অভিভাবককে গুরত্ব না দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করা একটি মহা অন্যায়। অমানবিক ও অসামাজিক কাজ।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২১ মে, ২০২৫
পালিয়ে বিয়ের আগে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাইল ছবি

বিয়ে মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এটা একটি জীবনকে অন্য আরেকটি জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়। তাই বিয়ে শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শুদ্ধতাও। ইসলামি শরিয়তে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত হয়েছে।


ইসলামি শরিয়ত অনুসারে বিয়ে পড়ানোর সময় সাক্ষী রাখতে হবে। সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার ৩/৯ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২৬৮)


সুতরাং বিয়ে যদি বাস্তবেই দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক সমঝদার সাক্ষীর সামনে এভাবে হয়ে থাকে, একজন প্রস্তাব দিয়েছেন আর অপরজন তা গ্রহণ করেছেন তাহলে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে অভিভাবককে গুরত্ব না দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করা একটি মহা অন্যায়। অমানবিক ও অসামাজিক কাজ। 


সুতরাং আল্লাহ তাআলার নিকট এই গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা দরকার। যত দ্রুত সম্ভব পরিবারকে এ বিষয়ে অবহিত করা। তাদের মানিয়ে নেয়া জরুরি। গোপন বিয়ে অমানবিক ও অসামাজিক হলেও যেহেতু করেই ফেলেছেন, এখন এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। 


মনে রাখতে হবে, এটি কোনো ছেলেখেলা নয় বরং এটি হলো, আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারাজীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন। ইসলামে তালাকের সুযোগ রাখা হয়েছে খুবই অপছন্দনীয়ভাবে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে চলে যায়। সমাধানের কোনও পথ থাকে না তখনই তালাক দেওয়া হয়ে থাকে। 


কিন্তু ইসলামে তালাক একটি জঘন্যতম বৈধ কাজ। রসুলুল্লাহ (সা.) তা চরমভাবে ঘৃণা করতেন। হাদিসে এসেছে, أبغض الحلال عند الله الطلاق ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল বিষয় হলো তালাক।’ (আবু দাউদ ২১৭৭)


বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা পছন্দ করে না ইসলাম


ইসলামী শরিয়তে বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অভিমত গুরুত্বপূর্ণ। এক হাদিসে এ বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।’ -(তিরমিজি, হাদিস : ১১০১; আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮৩) ঘোষণা না দিয়ে এবং আপনজনকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করা অসামাজিক, অমানবিক ও লজ্জাজনক কাজ। 


এ জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা পছন্দ করে না ইসলাম। ঘটা করে ঘোষণা দিয়ে বিয়ে করার কথা বলেছেন রাসুল (সা.)। বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, ‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে।’-(মুসনাদে আহমাদ ৪/৫)


ঘোষণা দিয়ে বিয়ে করতে বলেছেন নবীজি


উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সাহাবির বিয়ের খবর শুনে নির্দেশ দেন, তোমরা বিবাহ অনুষ্ঠানকে প্রকাশ্যে ঘোষণা কর, মসজিদে এটিকে উদযাপন কর এবং দফ (এক ধরণের বাদ্যযন্ত্র বিশেষ) বাজাও।’ -(তিরমিজি, ১০৮৯) 


আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ কর এবং প্রস্তাবনার বিষয়টি গোপন রাখ। -(জামিয়িস সাগীর, ৯২২)



পালিয়ে বিয়ে করার শাস্তি

 

বিয়ের প্রথম শর্ত হচ্ছে ছেলেমেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। ছেলের বয়স ২১ ও মেয়ের বয়স ১৮-এর ১ দিনের কম হলেও বয়স গোপন করে বিয়ে করলে মামলা-মোকদ্দমায় পড়ার আশঙ্কা থাকবে। বিশেষ করে মেয়ের বয়স ১৮-এর কম হলে মেয়ের অভিভাবক অপহরণের মামলা দিলে ছেলের বড় ধরনের জেল-জরিমানার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার মেয়েটি আদালতে গিয়ে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে মর্মে জবানবন্দি দিলেও প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ হেফাজতেও থাকা লাগতে পারে।

 

তাই নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করতে গেলে আইনকানুনও মানতে হবে। তবে মেয়ে যদি প্রাপ্তবয়স্ক হন, তাহলে অপহরণের মামলা করেও কোনো লাভ হয় না। বরং মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে মামলা দায়েরকারীকেই উল্টো সাজা পেতে হয়।

 

আবার পালিয়ে কয়েকজন বন্ধুকে সাক্ষ্যি রেখে বিয়ে করে নিলে অন্য আরেক শাস্তি রয়েছে দেশে। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনে (সংশোধিত ৮ই মার্চ, ২০০৫) বলা হয়েছে যে, যে সমস্ত বিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রার কর্তৃক সম্পাদিত হয়নি সেসব বিয়ে যে বা যারা করেছেন তিনি রেজিস্ট্রেশন করার উদ্দেশ্যে উক্ত বিয়ের খবর নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিকট দিবেন। যদি কেউ এই নিয়ম পালন না করে তবে সে দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। অবশ্য বিয়ের সব শর্ত মেনে ছেলে মেয়ে স্বাবালক হলে ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে হয়ে যাবে।


বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতি আবশ্যক


ইসলামী শরিয়তে বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অভিমত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, যারা তার অভিভাবকের (বাবা-মা কিংবা বড়ভাই এক কথায় অভিভাবক) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।’ -(তিরমিজি, ১০২১)


এই হাদিসের আলোকে অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেন বিয়ের আগে ঘোষণা দেওয়া মানে ‍‍‘বিয়ের সাক্ষী রাখা’ তাই এটি ওয়াজিবের পর্যায়ে। কেউ কেউ বলেন, ঘোষণা দেওয়া বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত।

 

thebgbd.com/NIT