ঢাকা | বঙ্গাব্দ

৭ দিনে এভারেস্ট জয়!

যুক্তরাজ্য ছাড়ার আগে তারা বিশেষ ধরনের কম অক্সিজেনযুক্ত তাঁবুতে রাত কাটিয়ে শরীরকে অভিযোজিত করেন।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২২ মে, ২০২৫
৭ দিনে এভারেস্ট জয়! চার ব্রিটিশ পবর্তারোহী।

এক সপ্তাহের মধ্যে লন্ডন থেকে উড়ে নেপাল এসে এভারেস্ট জয়ের পর আবার যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করা একদল সাবেক ব্রিটিশ বিশেষ বাহিনীর সদস্য বুধবার বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে অভিযানের আয়োজকেরা।


কাঠমান্ডু থেকে এএফপি জানায়, চার সদস্যের এই দলে রয়েছেন ব্রিটিশ সরকারের এক মন্ত্রী আলিস্টার কার্নস। তারা শুক্রবার লন্ডন ছাড়েন। রওনার আগে উচ্চতাভীতিহীনতা অর্জনে তাঁবু ঘরে বসেই শরীরে কম অক্সিজেনের সহ্য ক্ষমতা তৈরির চেষ্টা চালান—এজন্য ব্যবহার করেন বিতর্কিত ‘জেনন গ্যাস’, যা পর্বতারোহণ মহলে বিতর্ক তৈরি করেছে। 


যুক্তরাজ্য ছাড়ার আগে তারা বিশেষ ধরনের কম অক্সিজেনযুক্ত তাঁবুতে রাত কাটিয়ে শরীরকে অভিযোজিত করেন। এই অভিযানের মাধ্যমে তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবারের শিশুদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ করছেন। অস্ট্রিয়ার ফুরটেনবাখ অ্যাডভেঞ্চারস-এর লুকাস ফুরটেনবাখ এএফপিকে বলেন, ‘বুধবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে চার সদস্য, এক ফটোগ্রাফার এবং পাঁচজন শেরপা শৃঙ্গ জয় করেন।’


অভিযানকারীদের মধ্যে গার্থ মিলার, অ্যান্থনি স্টাজিকার এবং কেভিন গডলিংটন রয়েছেন। তারা ৮,৮৪৯ মিটার (২৯,০৩২ ফুট) উচ্চতা থেকে নামতে শুরু করেছেন। ফুরটেনবাখ জানান, ‘তারা আজ সন্ধ্যার মধ্যেই বেস ক্যাম্পে পৌঁছবেন এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সাত দিনের মধ্যেই যুক্তরাজ্যে ফিরে যাবেন।’ এই অভিযানের মাধ্যমে তারা যুদ্ধাহত পরিবারের সন্তানদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন।


অভিযান শুরুর আগে রয়্যাল মেরিন রিজার্ভের কর্নেল ও আফগানিস্তানে পাঁচবার মিশনে যাওয়া আলিস্টার কার্নস (৪৫) বলেন, ‘নিজে বহুবার দেখেছি—অনেকে ফিরতে পারেননি। তাদের রেখে যাওয়া সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে সম্মানজনক কাজ।’ কার্নস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি পদকপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য।


‘দ্রুত আরোহণের নতুন পদ্ধতি’


যদিও সবচেয়ে কম সময়ে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড এখনও নেপালি পর্বতারোহী লাকপা গেলু শেরপার দখলে—তিনি ২০০৩ সালে বেস ক্যাম্প থেকে চূড়ায় উঠেছিলেন মাত্র ১০ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটে। তবে দলের নেতা ও বাণিজ্যিক এয়ারলাইন পাইলট গার্থ মিলার বলেন, এটি ‘৮ হাজার মিটারের শৃঙ্গ জয়ের এক নতুন ধারা’। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ ক্রীড়াবিজ্ঞান ব্যবহার করেছি যাতে শরীরকে এমনভাবে প্রস্তুত করা যায় যাতে দ্রুত উচ্চতায় ওঠা যায়।’


সাধারণত এভারেস্টে অভিযানের জন্য পর্বতারোহীদের দুই মাস সময় লাগে, যার মধ্যে একাধিক অভিযোজন পর্ব থাকে। কিন্তু এই দলটি লন্ডন থেকে সরাসরি শনিবার এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে চলে আসে। ৮ হাজার মিটার উচ্চতার ওপরে অঞ্চলকে বলা হয় ‘ডেথ জোন’—এখানে হিমশীতল বাতাস ও কম অক্সিজেনের কারণে উচ্চতাজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে।


তারা ঘরে বসে ‘হাইপোক্সিক’ তাঁবু ও বিশেষ প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে অভিযোজন করে আসেন এবং রওনার দুই সপ্তাহ আগে জেনন গ্যাস গ্রহণ করেন। বিশ্ব অ্যান্টি-ডোপিং সংস্থা (ওয়াডা) ২০১৪ সালেই জেননের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, কারণ এতে ক্রীড়াশক্তি বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়।


‘নতুন পথের সন্ধান’


তবে ফুরটেনবাখ বলেন, জেনন গ্যাস দ্রুত অভিযোজন ও উচ্চতাজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। তিনি বলেন, ‘নতুন অভিযোজন পদ্ধতির খোঁজে ছিলাম।’ জার্মান চিকিৎসক মিশায়েল ফ্রাইস বলেন, জেনন গ্যাস শ্বাস গ্রহণের ফলে শরীরে ইরিথ্রোপয়েটিন (ইপিও) নামক হরমোন উৎপন্ন হয়, যা রক্তে অক্সিজেনবাহী লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ায়। ‘এটি মূলত উচ্চতায় অভিযোজনের প্রচলিত পদ্ধতির অনুকরণ করে,’ বলেন ফ্রাইস। ‘জেনন হিমোগ্লোবিন বাড়ায়, ফলে শরীর বেশি অক্সিজেন বহনে সক্ষম হয়।’


তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক পর্বতারোহণ সংস্থা ইউআইএএ'র মেডিকেল কমিশন সতর্কতা জারি করে জানায়, ‘বর্তমান গবেষণায় এ ধরনের শ্বাস গ্রহণে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির প্রমাণ নেই; বরং তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।’ 


জেননের ব্যবহার নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনাও করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আলপেনগ্লো এক্সপেডিশনস-এর পরিচালক অ্যাড্রিয়ান ব্যালিঙ্গার বলেন, ‘আমার কাছে এটি মূলত একটি কৌশলগত প্রদর্শন মনে হয়।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে অভিযানের মূল্য কমে যায়, কারণ এভারেস্ট জয়ের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এর অনিশ্চয়তা এবং মানসিক-শারীরিক সীমারেখার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিজের উপলব্ধি। এখানেই এর আসল শিক্ষা।’


তবে ফুরটেনবাখ, যিনি ২০২০ সাল থেকেই জেনন ব্যবহার করে আসছেন, বলেন, ‘এটি কার্যকর, তা দেখেছি—আর সব নতুন উদ্ভাবনের মতো আমরা বিজ্ঞানের আগেই এগিয়ে গেছি।’ তিনি আশাবাদী যে ভবিষ্যতে উচ্চতাভিত্তিক নিরাপত্তা প্রটোকলের অংশ হিসেবে জেননকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।


সূত্র: এএফপি


এসজেড