ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনা ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

এই আলোচনায় প্রশ্ন উঠেছে, তিনি সরে গেলে সরকারের ভবিষ্যৎ কী হবে, কীভাবে নতুন সরকার গঠিত হবে এবং আইনগত দিক থেকে কী ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ মে, ২০২৫
মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনা ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনা ঘিরে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এই আলোচনায় প্রশ্ন উঠেছে, তিনি সরে গেলে সরকারের ভবিষ্যৎ কী হবে, কীভাবে নতুন সরকার গঠিত হবে এবং আইনগত দিক থেকে কী ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে।


এই আলোচনার সূত্রপাত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এক বক্তব্য থেকে, যিনি জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি। তার মন্তব্যেই মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনার শুরু।


এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ মহলে নানা মত উঠে আসছে। আইনজীবীদের কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে গঠিত হয়েছিল। ফলে ইউনূস পদত্যাগ করলে নতুন সরকার গঠনের সুযোগ থাকলেও সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে না। রাষ্ট্রপতি তখন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে পারেন, যার একমাত্র দায়িত্ব হবে নির্বাচন পরিচালনা করা।


তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ভিন্নমত পোষণ করেন। তার মতে, বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংবিধানের বাইরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্টের আগের দুটি রায়ে নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, আইনের ব্যাখ্যার জায়গায় এখন বাস্তবতা কাজ করছে এবং সবকিছু আইনবহির্ভূতভাবে চলছে।


প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর হাইকোর্ট গত বছরের ডিসেম্বরে ওই সংশোধনীর একটি অংশ বাতিল করে, যার ফলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পথ আবারও খুলে যায়।


আইনজীবী মনজিল মোরসেদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যে ‘শূন্যতা’ তৈরি হয়েছিল, তার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন জরুরি ছিল। তবে এখন তিনি মনে করেন, নির্বাচনই প্রধান প্রয়োজন এবং তার জন্য নতুন করে অন্তর্বর্তী সরকার নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই যথেষ্ট।


তিনি বলেন, আদালতের রায়ের মাধ্যমে ফের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব সেই ব্যবস্থার উপরেই বর্তাবে। তার মতে, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ চাইলে বহাল থাকতে পারে বা রাষ্ট্রপতি নতুন সদস্য মনোনয়ন দিতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচন শুরুর অন্তত ৯০ দিন আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা উচিত।


এদিকে, প্রশ্ন উঠছে, মুহাম্মদ ইউনূস সরে গেলে বর্তমান উপদেষ্টারা কী থাকবেন? মনজিল মোরসেদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগে যারা কাজ করছেন, তিনি না থাকলে তাদের থাকারও সুযোগ থাকছে না। যদিও রাষ্ট্রপতি চাইলে নতুন উপদেষ্টাদের নিয়োগ দিতে পারেন।


শাহদীন মালিক মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন একজন প্রধান নির্ধারণ করা দরকার হবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যা সংবিধানবহির্ভূত, তা কোনো অবস্থাতেই সাংবিধানিক বলা যাবে না।


সব মিলিয়ে, মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনা দেশের বর্তমান সরকারব্যবস্থাকে নতুন এক অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে আইন, বাস্তবতা ও রাজনৈতিক চুক্তির টানাপোড়েনই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা।


সূত্র: বিবিসি বাংলা


thebgbd.com/NIT