গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আদর্শবাদী আন্দোলন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটালে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের আশায় উদ্যাপন করেছিল। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ৯ মাস পার হলেও দ্রুত নির্বাচন চাওয়ায় হতাশা বেড়েছে। এবার দেশের খ্যাতিমান নেতা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস হুমকি দিয়েছেন, যদি তাকে কাজ করতে না দেওয়া হয় এবং নির্বাচনের জন্য দেশ প্রস্তুত করার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের শুক্রবার (২৩ মে) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্মানিত মুহাম্মদ ইউনূসকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সেরা সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার হাতে নেয়ার সময় রাস্তাঘাটে রক্তপাত চলছিল, কিন্তু এখন তার সহযোগীরা বলছেন, তিনি বিভিন্ন পক্ষের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং নির্বাচনের পরিকল্পনায় ধীরগতিতে কাজ করছেন বলে সমালোচিত হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা না পেলে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। তার পদত্যাগ ঘোষণার খসড়া প্রস্তুত ছিল, তবে অন্য উপদেষ্টারা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন পদত্যাগ করলে দেশের অস্থিতিশীলতা বাড়বে। সেনাপ্রধানের নির্বাচনের দ্রুততার দাবি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের সমালোচনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছেন।
শেখ হাসিনার পুরানো বিরোধীরা এখন যেকোনো নির্বাচনে জয় লাভের সম্ভাবনা রাখে, কারণ তার দল বর্তমানে কার্যত নিষিদ্ধ এবং কার্যক্রম বন্ধ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাশ্বার হাসান মনে করেন, মুহাম্মদ ইউনূস একজন চমৎকার ব্যাংকার হলেও তার দৃঢ় ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অভাব রয়েছে এবং তিনি তার উপদেষ্টাদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন।
অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কাজ করা একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পথে তাকে সাহায্য করার কথা ছিল, কিন্তু কেউ কেউ তাকে উপেক্ষা করছেন বলে তিনি মনে করছেন। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা না হওয়ায় ধৈর্য হারিয়েছেন তিনি। তিনি আগে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব, তবে সুনির্দিষ্ট সময় দেননি। বর্তমানে তিনি মনে করেন রাজনৈতিক পরিবেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়।
গত নভেম্বরে তিনি ভাষণে বলেছিলেন, “নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, থামবে না, তবে অনেক কাজ বাকি।”
বিএনপি বলছে, দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণের আগে গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রয়োজন। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা ক্ষমতায় আসার সুযোগ চায়। প্রথম দিকে তারা অধ্যাপক ইউনূসের সরকারকে সমর্থন করলেও সাম্প্রতিক নীতিগত মতবিরোধের কারণে সহযোগিতা বন্ধ করেছে। বিতর্কের বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর বেসরকারিকরণ, মিয়ানমারে মানবিক সাহায্য করিডর চালু এবং কর কর্তৃপক্ষ (এনবিআর) ভাগ করার প্রস্তাব।
৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদের জন্য এই রাজনৈতিক অস্থিরতা বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে যখন প্রধান দুই দলের মধ্যে এক দল নিষিদ্ধ এবং অপরটি তড়িঘড়ি নির্বাচন চায়। এই পরিস্থিতিতে তিনি সময় নিতে চান বলে মনে হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত এবং এটি সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, শেখ হাসিনার সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের সংঘাত চললেও, তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে ভয় পাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ এখনও অধ্যাপক ইউনূসের ওপর আস্থা রাখে।
ফেব্রুয়ারিতে অধ্যাপক ইউনূসের সাবেক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করেন, যার উদ্দেশ্য ছাত্রদের সংগঠিত করে ইউনূসের পাশে রাখা। নাহিদ বলেন, তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করেছেন এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর অস্থিরতা ও চাপের কারণে অধ্যাপক মনে করছেন কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
thebgbd.com/NA