ঢাকা | বঙ্গাব্দ

দেশের প্রথম নির্মিত টার্ন টেবিল লালমনিরহাটে

লালমনিরহাটে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর টার্ন টেবিলটি প্রায় তিন দশক আগে পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়।
  • | ১৮ মে, ২০২৪
দেশের প্রথম নির্মিত টার্ন টেবিল লালমনিরহাটে সংগৃহীত

লালমনিরহাটে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর টার্ন টেবিলটি প্রায় তিন দশক আগে পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকে ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর জন্য ঢাকায় যেতে হত। তবে এখন আর ঢাকা নয়, লালমনিরহাটে তৈরি হলো দেশের প্রথম টার্ন টেবিল। এতে অর্থ সাশ্রয় হলো লালমনিরহাট রেল বিভাগের


জানা যায়, লালমনিরহাট রেলস্টেশনের আধা কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে সিক লাইন এলাকায় ৯ শতক জমির ওপর টার্ন টেবিলটির অবস্থান। দেশের আগের টার্ন টেবিলগুলো ব্রিটিশ আমলের, বিদেশ থেকে আনা।


লালমনিরহাটের টার্ন টেবিলটি বিকল হওয়ার পর পশ্চিমাঞ্চলের রেলের ইঞ্জিন ও কোচগুলো কয়েক মাস পরপর ঢাকা থেকে ঘুরিয়ে আনা হতো। তবে লালমনিরহাটে প্রথমবারের মতো দেশে টার্ন টেবিল নির্মাণ করায় সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে রেলওয়ে বিভাগের। আর এ টার্ন টেবিলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে রেলের পুরাতন অনেক জিনিসপত্র।


লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দফতর সূত্র জানায়, রেলের কোচ বা ইঞ্জিনকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর টার্ন টেবিলের ওপর রেখে ঘোরানো হয়। এতে বাঁ দিকের চাকা ডান দিকে, ডান দিকের চাকা বাঁ দিকে চলে যায়। ফলে দুই পাশের চাকা সমানভাবে ক্ষয় হয়। এতে চাকার স্থায়িত্ব বাড়ে ও দুর্ঘটনা ঝুঁকি কমে।            


ব্রিটিশ আমলে তখনকার কর্মকর্তারা যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে লালমনিরহাটে টার্ন টেবিল নির্মাণ করেন। যা ১৯৯৩ সালে বিকল হয়ে পড়লে ব্যবহার বন্ধ করে রেলওয়ে দপ্তর। এরপর থেকে লালমনিরহাট বিভাগের কোচ ও ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য কোচ ও ইঞ্জিনগুলো কয়েক মাস পর পর ঢাকায় নেওয়া হত। যাতে সময় ও অর্থ অপচয় হত।


তাই দেশেই টার্ন টেবিল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। পরে লালমনিরহাটে সিক লাইন এলাকায় এটি নির্মাণের জন্য ৯ শতক জমি নেওয়া হয়। নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৫ লাখ টাকা। বিভাগীয় রেলওয়ে দফতরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামানের (বাবু) নকশা ও প্রযুক্তিতে এ টার্ন টেবিলটি তৈরি হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, স্থাপনাটির তিন ধাপে পাকা দেয়াল রয়েছে; যা সীমানাপ্রাচীর, সুরক্ষা প্রাচীর ও লাইন দেয়াল নামে পরিচিত। এর মেঝে আরসিসি ঢালাই দেওয়া।


 এতে পানি জমলে পানির পাম্প দিয়ে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। টার্ন টেবিলটি নির্মাণে ৩৫০ টন ভার বহনে সক্ষম একটি রোলার থ্রাস্ট বিয়ারিং, আটটি এক্সেল বিয়ারিং, ব্রিজ নির্মাণের জন্য এমএস লোহার তৈরি এইচবিম, অব্যবহৃত রেললাইন, ট্রেনের অব্যবহৃত চারটি চাকা, এমএস টপ প্লেট, চেকার প্লেট, বলস্টার প্লেট, এমএস অ্যাঙ্গেল ও জিআই পাইপের রেলিং ব্যবহার করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

 

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবদুস সালাম জানান, সম্পূর্ণ দেশি প্রযুক্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্প টাকা ব্যয়ে টার্ন টেবিলটি নির্মিত হয়েছে। এতে অব্যবহৃত লাইন, চাকাসহ অন্য লৌহজাত নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। রেলের কর্মকর্তারা সবসময় নিজেদের মেধা দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। এটি তার উদাহরণ।