উচ্চ খেলাপি ঋণ, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থতা এবং দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার কারণে ২০টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে (এনবিএফআই) চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সনদ বা লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে—কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চিঠির জবাব বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করা বা অবসায়নের (liquidation) সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
চিঠি পাওয়া ২০টি প্রতিষ্ঠান হলো:
সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স এবং এফএএস ফাইন্যান্স।
এই তালিকায় রয়েছে আলোচিত পি কে হালদারের মালিকানাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও। তিনি যখন এ অনিয়ম করেন, তখন এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাংকের এমডি পদে ছিলেন। পি কে হালদারের কেলেঙ্কারির পর ইসলামী ধারার কিছু ব্যাংকেও অনিয়ম বাড়ে, যার ফলে পুরো আর্থিক খাত আজ চরম দুরবস্থায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চিহ্নিত ২০টি প্রতিষ্ঠানে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানতের পরিমাণ ছিল ২২,১২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত ১৬,৩৬৭ কোটি এবং ব্যক্তি আমানত ৫,৭৬০ কোটি টাকা। একই সময়ে তাদের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫,৮০৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৮৩ শতাংশ অর্থাৎ ২১,৪৬২ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। অথচ এসব ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ৬,৮৯৯ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৩,৪৪৮ কোটি টাকায়। প্রতিবছর এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ খরচ হয় ১৭২ কোটি টাকা, এমডিদের বেতন ১২ কোটি এবং অন্যান্য খরচসহ মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২০৬ কোটি টাকায়—যার বিপরীতে প্রকৃত কোনো সুদ আয় নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এসব প্রতিষ্ঠান আমানত ফেরত দিতে পারছে না, ফলে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং সারা খাতেই আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এনবিএফআই খাতের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫,৪৫০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২৫,৮৯০ কোটি টাকা খেলাপি। যদিও সেপ্টেম্বরের তুলনায় খেলাপি কিছুটা কমেছে, তবে মূল চাপ সৃষ্টি করেছে এই ২০টি দুর্বল প্রতিষ্ঠান। কারণ, খাতের বাকি ১৫টি এনবিএফআইয়ের গড় খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশের নিচে, যা অনেক ব্যাংকের তুলনায় ভালো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন কঠোর তদারকির আওতায় রাখা হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়।
thebgbd.com/NA