ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সিরিয়া মার্কিন জ্বালানি চুক্তি

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এবং সিরিয়ায় মার্কিন দূত থমাস ব্যারাক।
  • অনলাইন ডেস্ক | ৩০ মে, ২০২৫
সিরিয়া মার্কিন জ্বালানি চুক্তি চুক্তি সইয়ের পর সব পক্ষ।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বিদ্যুৎ খাত পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সিরিয়া বৃহস্পতিবার কাতারি, মার্কিন ও তুর্কি কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি জ্বালানি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দামেস্ক থেকে এএফপি জানিয়েছে, এই চুক্তিটি সিরিয়ার প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে সই হয়েছে। 


চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এবং সিরিয়ায় মার্কিন দূত থমাস ব্যারাক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার অর্ধেক পূরণ করতে সক্ষম হবে।


এ সময় ব্যারাক সিরিয়া-ইসরায়েলের মধ্যে একটি অনাগ্রাসন চুক্তির আহ্বান জানান এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেন। সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত বিদ্যুৎ খাত পুনর্গঠনের প্রয়াসের অংশ হিসেবে এ জ্বালানি চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়।


সিরিয়ার জ্বালানি মন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বাশির একে একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ ও দেশের ভেঙে পড়া অবকাঠামোর জন্য একটি ‘মোড় ঘোরানো সময়’ বলে আখ্যায়িত করেন। চুক্তিবদ্ধ কনসোর্টিয়ামটির নেতৃত্বে রয়েছে কাতারের ইউসিসি কনসেশন ইনভেস্টমেন্টস, তুরস্কের কালিওন জিইএস এনার্জি ইয়াতিরিমলারি ও সেঙ্গিজ এনার্জি, এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ।


১৪ বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডকে ধ্বংস করে দিয়েছে, ফলে জনগণকে প্রতিদিন ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাটাতে হচ্ছে। প্রকল্পটিতে দেশটির মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে চারটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দক্ষিণাঞ্চলে একটি ১,০০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত। বাশির জানান, এই প্ল্যান্টগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে।


থমাস ব্যারাক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করেছেন এবং ভবিষ্যতেও সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি সিরিয়াকে ‘অবিচল প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন যাতে দেশটির সীমান্তগুলোকে 'বাণিজ্য ও সহযোগিতার পটে' রূপান্তর করা যায়।


ইউসিসির প্রধান নির্বাহী রামেজ আল-খাইয়াত বলেন, এই প্রকল্পটি ৫০,০০০-এর বেশি প্রত্যক্ষ ও আড়াই লাখ পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। গত সপ্তাহে তুরস্কের জ্বালানি মন্ত্রী আলপারস্লান বায়রাকতার বলেন, তাদের দেশ সিরিয়াকে বছরে ২ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে—যা থেকে ১,৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।


যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর সিরিয়া বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা জোরদার করেছে। গত মার্চে কাতার জর্ডানের মাধ্যমে সিরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ শুরু করে, যার লক্ষ্য বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানো।


দামাস্কাসে অবস্থানকালে ব্যারাক বৃহস্পতিবার সৌদি চ্যানেল আল আরাবিয়াকে বলেন, তিনি সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি অনাগ্রাসন চুক্তি দেখতে চান। ১৯৪৮ সাল থেকে সিরিয়া ও ইসরাইল প্রযুক্তিগতভাবে যুদ্ধে রয়েছে। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল সিরিয়ার গোলান হাইটস দখল করে নেয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ডিসেম্বরের পদত্যাগের পর থেকে ইসরায়েল বহুবার সিরিয়ায় বিমান হামলা ও অনুপ্রবেশ চালিয়েছে।


ব্যারাক বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব ‘সমাধানযোগ্য সমস্যা’ এবং তারা ‘অনাগ্রাসন চুক্তি দিয়ে শুরু করতে পারে, এরপর সীমানা ও সীমান্ত নিয়ে আলোচনা করে’ একটি নতুন সম্পর্ক গড়তে পারে। ৮ মে ফ্রান্সে শারা বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ‘পরোক্ষ মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনা’ চলছে যাতে ‘পরিস্থিতি এমন জায়গায় না পৌঁছায় যেখানে কোনও পক্ষই তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না।’


রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সানা জানায়, ব্যারাক—যিনি তুরস্কেও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে রয়েছেন—সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শাইবানির সঙ্গে রাজধানী দামাস্কাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসভবন উদ্বোধন করেছেন। এএফপির আলোকচিত্রীরা দেখেন, আবু রুম্মানেহ এলাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছেই রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই মার্কিন পতাকা উত্তোলন করা হয়।


যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘এক্স’-এ দেওয়া পোস্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প বলেন, ‘টম বোঝেন, সিরিয়ার সঙ্গে কাজ করলে উগ্রবাদ ঠেকানো, সম্পর্ক উন্নয়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।’ ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র দামাস্কাসে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দূতাবাস পুনরায় চালু করেনি, তবে ব্যারাকের সফর ও পতাকা উত্তোলন সিরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।


সূত্র: এএফপি


এসজেড