ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইন্টারকে উড়িয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরা পিএসজি

পিএসজির ৫৫ বছরের ইতিহাসে এটিই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। একই সঙ্গে ইউরোপের নবম ক্লাব হিসেবে ট্রেবল শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ল প্যারিসের ক্লাবটি।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০১ জুন, ২০২৫
ইন্টারকে উড়িয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরা পিএসজি ইন্টার মিলানকে বিধ্বস্ত করে নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতল পিএসজি। মায়ুলুর শেষ গোলের পর প্যারিসিয়ানদের উল্লাস।

মেসি-এমবাপ্পে-নেইমারের পিএসজি পারেনি। একে একে মেগাস্টাররা ক্লাব ছেড়েছেন। সবশেষ এই মৌসুম শুরুর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর ব্যালন ডি'অর জিততে ক্লাব ছেড়েছেন এমবাপ্পেও। লুইস এনরিকের দলে সে অর্থে বড় কোনো তারকাই নেই। একঝাঁক তরুণকে নিয়ে গড়া দলটাই সুন্দর ফুটবলের পসরা সাজিয়ে অসাধ্য সাধন করল। প্যারিসিয়ানদের পরম আকাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অবশেষে ধরা দিল। ফাইনালে খেই হারানো ইন্টার মিলানকে নাকানিচুবানি খাইয়ে শিরোপা ঘরে তুলল পিএসজি। আর মিউনিখ ধরে রাখল তার ঐতিহ্য, নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল ইউরোপ।


শনিবার (৩১ মে) অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ইউরোপসেরা হয়েছে পিএসজি। জোড়া গোল ও অ্যাসিস্টে রেকর্ডবুকে নাম তুলেছেন ১৯ বছর বয়সী ফরসি মিডফিল্ডার ডিজায়ের দুয়ে। বাকি গোল তিনটি আশরাফ হাকিমি, খিচা কাভারাৎস্খেলিয়া ও মায়ুলুর পা থেকে এসেছে।


পিএসজির ৫৫ বছরের ইতিহাসে এটিই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। একই সঙ্গে ইউরোপের নবম ক্লাব হিসেবে ট্রেবল শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ল প্যারিসের ক্লাবটি। একই সঙ্গে পিএসজির কোচ লুইস এনরিকের এটি দ্বিতীয় ট্রেবল। ২০১৫ সালে তার অধীনেই বার্সা শেষবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে। সে মৌসুমে কাতালান জায়ান্টদের ট্রেবল জিতিয়েছিলেন তিনি। পেপ গার্দিওলার পর দ্বিতীয় কোচ হিসেবে দুইবার ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লেন তিনি। অন্যদিকে সিমনে ইনজাগির অধীনে শেষ তিন মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে হারের মুখ দেখতে হলো নেরাজ্জুরিদের। এক মৌসুম আগে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ফাইনালে হেরেছিল ইন্টার।


মিউনিখে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়েছে পিএসজি। লুইস এনরিকের দলের ছন্দময় পাসিং ও গতিশীল ফুটবলের সামনে ইন্টার মিলানের গতিহীন খেলা পাত্তাই পায়নি।পুরো ম্যাচে সমানতালে আক্রমণ করে গেছে পিএসজি। ইন্টার মিলান প্রথমার্ধে একটা শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। প্যারিসিয়ানরা যেখানে দুই অর্ধ মিলিয়ে ২৩টি শটের ৮টি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে, বিপরীতে নেরাজ্জুরিরা ৮টি শট নিয়ে মাত্র ২টি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে।


ম্যাচের ১২ মিনিটে ইন্টার মিলানেরই সাবেক খেলোয়াড় আশরাফ হাকিমি পিএসজিকে লিড এনে দেন। দারুণ এক থ্রু-বলে ভিতিনিয়া ইন্টারের রক্ষণদেয়াল চুরমার করে দেন। সেই বল ডিজায়ের দুয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফাঁকায় দাঁড়ানো হাকিমিকে পাস দেন। ফাঁকা জালে সহজেই বল পাঠান এই মরোক্কান। গোল করে অবশ্য উদযাপন করেননি তিনি। নিজের সাবেক ক্লাবের সমর্থকদের উদ্দেশে বরং করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। নেরাজ্জুরি সমর্থকরাও তাকে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান।


এদিন প্রথমার্ধের নায়ক ডিজায়ের দুয়ে। ১৯ বছর বয়সী এই ফরাসি চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছেন। তবে সেরাটা যেন ফাইনালের জন্যই জমিয়ে রেখেছিলেন। প্রথমে হাকিমিকে দিয়ে গোল করানোর পর দ্বিতীয় গোলটি নিজেই করেছেন।


পিএসজির উপর্যুপরি আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল ইন্টারের রক্ষণদেয়ালে।  ইন্টার আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করলেও বারবার বল হারাচ্ছিল। আর বল হারানোর খেসারত দিয়েই দ্বিতীয় গোলটি হজম করে ইনজাগির শিষ্যরা।


ইন্টার মিলান আক্রমণে উঠলেও পিএসজির কর্নারের কাছে পাচোর কাছে বল হারায়। এই সেন্টারব্যাক দ্রুত পাস বাড়িয়ে কাউন্টার অ্যাটাকের শুরু করেন। ডেম্বেলে দুয়ের বাঁয়ে সরে জন এবং পাস বাড়ান। দুয়ের ভলি ডিমার্কোর পায়ে লেগে দিক বদলে জালে জড়ায়। ১৯ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে গোল ও অ্যাসিস্ট করে রেকর্ড গড়েছেন এই ফরাসি। তার চেয়ে কম বয়সে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে একই সঙ্গে গোল ও অ্যাসিস্ট আর কেউই করতে পারেননি। 


দুই গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় পিএসজি।


দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে এনরিকের দল। প্রথমার্ধে মাত্র দুটি শট নেয়া ইন্টার এই অর্ধে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও দোন্নারুমাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি নেরাজ্জুরিরা।


উল্টো ৬৩ মিনিটে ফের গোল হজম করে বসে তারা। এবার গোলের উৎস দেম্বেলের ব্যাকহিলের ফ্লিক। বল ধরে দারুণ গতিতে ওপরে ওঠেন ভিতিনিয়া। এরপর তিনি বল বাড়ান বক্সে জায়গা করে নেয়া দুয়েকে। এক নজরে ইন্টারের গোলরক্ষক সোমারের অবস্থান দেখে নিয়ে নিচু শটে ডান কোনা দিয়ে বল জালে পাঠান এই ফরাসি। এবারের আসরে ১৬ ম্যাচে ৫ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট করলেন এই ১৯ বছর বয়সী। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে ৫৪ ম্যাচে ১৫ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্ট করলেন দুয়ে।


গোলের পর অবশ্য জার্সি খুলে উদযাপন করায় হলুদ কার্ড দেখতে হয়েছে দুয়েকে। এরপরই তাকে মাঠ থেকে তুলে নেন এনরিকে।


এই গোলের পরই মোটামুটি হাল ছেড়ে দেয় ইন্টার মিলান। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবধান বাড়ায় পিএসজি। ৭৩ মিনিটে স্কোরশিটে নাম তোলেন কাভারাৎস্খেলিয়া। ম্যাচজুড়ে দারুণ খেলা এই উইঙ্গার দেম্বেলের বাড়ান পাস ধরে দৌড়ে গতিতে ইন্টারের রক্ষণ চুরমার করে বল জালে পাঠান।


৮৪ মিনিটে ফাবিয়ান রুইজের বদলি হিসেবে নামার দুই মিনিটের মাথায় স্কোরশিটে নাম তুলেছেন সেনি মায়ুলুও। ব্র্যাডলি বারকোলার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে বক্সের বাঁ দিকে জায়গা খুঁজে নেন এই ১৯ বছর বয়সী। এরপর বল জালে পাঠান।  


১৯৬১-৬২ মৌসুমে বেনফিকার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের (৫-৩) পর এই প্রথম কোনো দল ফাইনালে ৫ গোল হজম করলো। 


thebgbd.com/NIT