মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার পরমাণু চুক্তির অধীনে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এদিকে তেহরান যদিও বলে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করছে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
২০১৮ সালে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে পরিত্যক্ত বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এপ্রিল থেকে পাঁচ দফা আলোচনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ একটি মূল বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। অ্যাক্সিওস নিউজ আউটলেটে ওয়াশিংটনের প্রস্তাব তেহরানকে কিছু পরমাণু জ্বালানি সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়ার পর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বলেছেন, ‘আমাদের সম্ভাব্য চুক্তির অধীনে - আমরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কোনও অনুমতি দেব না!’
রিপাবলিকান ট্রাম্পও এই অচলাবস্থার জন্য পূর্বসূরী জো বাইডেনকে দায়ী করে বলেছেন, ডেমোক্র্যাটের ‘ইরানকে ইউরেনিয়াম ‘সমৃদ্ধকরণ’ থেকে অনেক আগেই বিরত রাখা উচিত ছিল। অ্যাক্সিওস বলেছেন, শনিবার তেহরানে ওয়াশিংটন যে সর্বশেষ প্রস্তাব পাঠিয়েছে তাতে ইরানের মাটিতে সীমিত পরিমাণে নিম্ন-স্তরের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেওয়া হবে। অবশ্য তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। ইরান জোর দিয়ে বলেছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ‘লুকানোর কিছু নেই’।
- ‘আরো স্বচ্ছতার প্রয়োজন’ -
আইএইএ রিপোর্টে দেখা গেছে, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন বাড়িয়েছে, যা পরমাণু অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। আরাঘচির সাথে দেখা করার আগে গ্রোসি বলেছেন, ‘ইরানে আরো স্বচ্ছতার প্রয়োজন - এটা খুবই স্পষ্ট এবং বেশ কিছু কার্যকলাপের পূর্ণ ব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই আমাদের এই আত্মবিশ্বাসে আনতে পারবে না’। গ্রোসি আরো বলেছেন, রিপোর্টের কিছু ফলাফল ‘কারো কারো জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে এবং আমরা সমালোচনার শিকার হতে অভ্যস্ত।’
ইরান প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে সতর্ক করে দিয়েছে, যদি ইউরোপীয় শক্তিগুলো পরমাণু নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের হুমকি দেয়, তাহলে তারা প্রতিশোধ নেবে। আরাঘচি আইএইএ সম্পর্কে বলেছেন, ‘কিছু দেশ ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করার জন্য এই সংস্থাটির অপব্যবহার করার চেষ্টা করছে। আশা করি এই সংস্থাটি এই ফাঁদে পা দেবে না।’
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির শর্ত হিসেবে ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে যে, তারা তাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো যেন প্রত্যাহার করে নেয়। শনিবার আরাঘচি বলেছেন, ওমানের মধ্যস্থতায় পাঁচ দফা আলোচনার পর তিনি পরমাণু চুক্তির জন্য মার্কিন প্রস্তাবের ‘উপাদান’ পেয়েছেন।
- ‘চুক্তি হোক বা না হোক’ -
আরাঘচি এবং গ্রোসি উভয়ই মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সাথে দেখা করেছেন। তিনি মার্কিন-ইরান আলোচনার প্রশংসা করেছেন এবং ‘পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধে নামার জন্য উত্তেজনা হ্রাস’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা ‘গ্যারান্টি’ চাই নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকরভাবে প্রত্যাহার করা হবে।’ তিনি বলেছেন, ‘এখনো পর্যন্ত মার্কিন পক্ষ থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম শনিবার জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে একটি পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে যা হোয়াইট হাউস ‘গ্রহণযোগ্য’ এবং তেহরানের ‘সর্বোত্তম স্বার্থে’ গ্রহণ করা উচিত। কূটনৈতিক আদান-প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ জানিয়েছে, প্রস্তাবে ইরানকে সমস্ত সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং পরমাণু শক্তি উৎপাদনের জন্য একটি আঞ্চলিক গোষ্ঠী তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড