ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সব শিক্ষকের যোগ্যতার প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ

প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের নথি পৌঁছতে হবে স্কুল পরিদর্শকদের কাছে। এই নথির ভিত্তিতে পরিদর্শকরা রিপোর্ট তৈরি করবেন।
  • | ১৮ মে, ২০২৪
সব শিক্ষকের যোগ্যতার প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ শিক্ষা দপ্তরের নতুন এই উদ্যোগে শিক্ষকদের বড় অংশই ক্ষুদ্ধ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সব স্কুলশিক্ষকের যোগ্যতার প্রমাণপত্র নতুন করে জমা দিয়ে বলেছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। নিয়োগ দুর্নীতিতে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নথি জমা দেওয়ার এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এপ্রিল মাসে ভুয়া নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার বিচার চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু নির্দেশ দেন, ২০১৬ সালের আগে হওয়া সব নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরির প্রাপকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।

এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষককে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি জমা দিতে হবে সরকারের কাছে। এই মর্মে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দপ্তর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২৭ মে তারিখের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নথি জমা দিতে হবে।

প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের নথি পৌঁছতে হবে স্কুল পরিদর্শকদের কাছে। এই নথির ভিত্তিতে পরিদর্শকরা রিপোর্ট তৈরি করবেন। নথি পেশ করার জন্য ইতিমধ্যে বিশেষ পোর্টাল খোলা হয়েছে। সেখানে নথি জমা দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে দিতে হবে হার্ড কপি।

শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগপত্র ও বর্তমান চাকরির প্রমাণ সম্বলিত নথিও জমা দিতে হবে।

শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া

শিক্ষা দপ্তরের নতুন এই উদ্যোগে শিক্ষকদের বড় অংশই ক্ষুদ্ধ। বিশেষত কাজের চাপে থাকা প্রধান শিক্ষকেরা সমস্যায় পড়ছেন। সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায় চৌধুরী বলেন, কিছুদিন আগেই এক দফা কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তারপর আবার নতুন করে নথি জমা করতে হবে। এর ফলে আমাদের ফোকাস সরে যাচ্ছে। যারা স্কুল বা শিক্ষা নিয়ে ভাবছেন, তাদের ব্যতিব্যস্ত করার চেষ্টা নয় কি এসব?

এর ফলে শিক্ষকদের একাংশ বেশ বিব্রত বোধ করছেন। তারা কেউ তিন দশক স্কুলে চাকরি করছেন। কেউ বা অবসরের মুখে। এত পুরনো কাগজপত্র সকলের হাতে নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কি এদের বেতন বা অবসরকালীন সুবিধা নিয়ে সংশয় তৈরি হবে?

অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স এন্ড হেডমিস্ট্রেস সংগঠনের সভাপতি ড. হরিদাস ঘটক বলেন, কোনো কোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে সন্দেহ থাকতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে প্রশ্ন আছে, তাদের নথিপত্র খতিয়ে দেখা যেত। কিন্তু সব শিক্ষকের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখার বিষয়টা সমর্থন করতে পারছি না।

এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে মনে করেন শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী। তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি সামনে এসেছে। কিন্তু সেটাকে গুলিয়ে দিতে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে বা কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। এটা আসলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা। এর মূল উদ্দেশ্য সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া।

দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষিকার পদে থাকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরী এ খবর শুনে বিস্মিত। তিনি বলেন, দুর্নীতির চাপে সততার সঙ্গে নিযোগ পাওয়া শিক্ষকরাও বিব্রত হচ্ছেন। সকলের পক্ষে সময়মতো কাগজ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সৎ ও অসৎ উভয়কেই একই দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। এতে শুধু শিক্ষক নয়, শিক্ষা ব্যবস্থারও সংকট তৈরি হবে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে