ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জয়ের পথে লি জায়ে-মিয়ং

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর রাত ৮টায় (গ্রিনিচ মান সময় ১১:০০টা) থেকেই ব্যালট গণনা শুরু হয়।
  • অনলাইন ডেস্ক | ০৩ জুন, ২০২৫
জয়ের পথে  লি জায়ে-মিয়ং লি জায়ে-মিয়ং

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামঘেঁষা ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী লি জায়ে-মিয়ং ভূমিধস বিজয়ের পথে রয়েছেন বলে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক্সিট পোলগুলো দেখিয়েছে। কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ভোটগ্রহণে ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা গেছে।


সিউল থেকে এএফপি জানায়, ছয় মাস আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিতর্কিত মার্শাল ল ঘোষণায় দেশ গভীর সংকটে পড়ার পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি প্রধান সম্প্রচারমাধ্যম পরিচালিত এক্সিট পোল অনুযায়ী লি পেয়েছেন ৫১.৭ শতাংশ ভোট। অপরদিকে রক্ষণশীল প্রার্থী কিম মুন-সুর ঝুলিতে জমেছে ৩৯.৩ শতাংশ ভোট।


বিভিন্ন অন্তর্বর্তী নেতার অধীনে চলা দীর্ঘ অচলাবস্থার পর দক্ষিণ কোরিয়াবাসী নতুন সূচনার অপেক্ষায় ছিলেন। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জনমত জরিপে লিকে অনেকটা এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। ৬৮ বছর বয়সী ট্যাক্সিচালক চোই সাং-উক ভোট দিয়ে বলেন, ‘আমি চাই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মতাদর্শগত দ্বন্দ্বের পরিবর্তে শান্তি ও ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করুন।’


ভোট গণনা শেষে জাতীয় নির্বাচন কমিশন ফল নিশ্চিত করলেই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, যা সম্ভবত বুধবার ভোরেই হবে। তবে তার সামনে রয়েছে জটিল সব চ্যালেঞ্জ, বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতা, বিশ্বের অন্যতম নিম্ন জন্মহার ও উত্তর কোরিয়ার বেড়ে চলা সামরিক আগ্রাসন।


তবে বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনকে মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউনের মার্শাল ল ঘোষণার প্রতিক্রিয়াতেই ব্যাখ্যা করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থির দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই এ ঘটনার অভিঘাতে কয়েক মাস কার্যত নেতৃত্বশূন্য ছিল দেশটি।


সুক মিয়ং উইমেন্স ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাং জু-হিউন বলেন, ‘এ ভোট অনেকটাই পূর্ববর্তী সরকারের ওপর গণরায় হয়ে গেছে। মার্শাল ল ও অভিশংসন-সংক্রান্ত সংকট শুধু মধ্যপন্থীদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি, রক্ষণশীলদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’ রক্ষণশীল প্রার্থী কিম, যিনি ইউনের শ্রমমন্ত্রী ছিলেন, সংস্কারপন্থী পার্টির লি জুন-সকের সঙ্গে জোট বাধতে ব্যর্থ হন, যার ফলে ডানপন্থী ভোট বিভক্ত হয়ে পড়ে।


মার্শাল ল প্রয়োগে পার্লামেন্টে সশস্ত্র সেনা পাঠানোর ঘটনায় ইউন অভিশংসিত হন। ২০১৭ সালে পার্ক গিউন-হেয়র পর তিনিও হলেন টানা দ্বিতীয় রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট যিনি পদচ্যুত হলেন। ৭৯ বছর বয়সী ভোটার পার্ক ডং-শিন বলেন, ‘বেসামরিক শাসন স্থগিত করার যে চেষ্টা করা হয়, তা আমাদের অতীত একনায়কতান্ত্রিক সময়ের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।’ তিনি এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, যিনি  ‘এ ধরনের অপকর্মের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করবেন।’


জাতীয় পরিষদে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা একাধিক টিভি স্ক্রিনে এক্সিট পোল ও ভোট গণনা সরাসরি দেখতে বিশেষ কক্ষ স্থাপন করেন। ফলাফল আসার সঙ্গে সঙ্গেই ‘লি জায়ে-মিয়ং’ স্লোগানে কক্ষটি মুখর হয়ে ওঠে। দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিকেল নাগাদ ভোটার উপস্থিতি ছিল ৭৭.৮ শতাংশ—প্রায় দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটির মানুষ গত ছয় মাসের অস্থিরতার অবসান ঘটাতে মুখিয়ে ছিলেন।


ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর রাত ৮টায় (গ্রিনিচ মান সময় ১১:০০টা) থেকেই ব্যালট গণনা শুরু হয়। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জিমনেসিয়ামে ব্যালটবাক্স আসতে শুরু করে। ভোটের দিনে আবহাওয়া ছিল সুন্দর, রাস্তাঘাট শান্ত। সরকারি ছুটির দিনে মানুষ পরিবার নিয়ে বাইরে বের হন। তবে নির্বাচন ও পরবর্তী দিনের অভিষেক নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে ও কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন করে।


লি—যিনি গত বছর এক হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যান. চলতি প্রচার অভিযানে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ও গ্লাস শিল্ডের আড়ালে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ায় একজন প্রেসিডেন্ট কেবল একবারের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি দায়িত্ব পালন করেন।


সূত্র: এএফপি এসজেড