ঢাকা | বঙ্গাব্দ

হজ শুরু

মঙ্গলবার বিকাল থেকেই মিনায় হাজিদের আগমন শুরু হয়। বাস থেকে নামার সময় হজকর্মীরা তাদের হাতে তুলে দেন কফি ও খেজুর।
  • অনলাইন ডেস্ক | ০৪ জুন, ২০২৫
হজ শুরু অংশ নিচ্ছেন প্রায় ১৪ লাখ হাজী।

প্রখর রোদ আর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বুধবার থেকে পবিত্র মক্কা নগরীতে হজ পালন শুরু হয়েছে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে ইতোমধ্যেই জড়ো হয়েছেন প্রায় ১৪ লাখ মুসলিম। গত বছর তীব্র গরমে ১ হাজারের বেশি হাজীর মৃত্যু হওয়ায়, এবার তা ঠেকাতে তৎপর কর্তৃপক্ষ। সৌদি আরবের মক্কা থেকে এএফপি জানায়, তীব্র দাবদাহের মধ্যে এবারের হজ পালিত হচ্ছে, যেখানে তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি।


সাদা ইহরাম পরিহিত হাজিরা মক্কার মসজিদুল হারামের কেন্দ্রে অবস্থিত ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফের চারপাশে ধীরে ধীরে তাওয়াফ শুরু করেন। হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার পালন করা ফরজ।


২০২৪ সালে প্রচণ্ড গরমে ১৩০১ জন হাজীর মৃত্যু হয়। এ বছর সেই ভয়াবহতা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ছায়াযুক্ত এলাকা তৈরিসহ নানা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বুধবার হজের প্রথম দিনে কাবা শরিফের চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণের মাধ্যমে হাজিরা তাওয়াফ শুরু করবেন। এই পবিত্র স্থানটির দিকে মুখ ফিরিয়ে বিশ্বজুড়ে মুসলমানের প্রতিদিন নামাজ আদায় করেন।


এরপর হাজীরা রওনা হবেন মিনার পথে। হাজারো তাঁবুর সেই শহরে একরাত অবস্থান করবেন তাঁরা। এরপর বৃহস্পতিবার হজের মূল পর্ব আরাফাতের ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। এখানেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।


হজ শুরুর আগে মুসল্লিদের ‘ইহরাম’ বাঁধতে হয়। এ জন্য পুরুষরা পরেন সেলাইবিহীন দু’টুকরো সাদা কাপড় যা কাফনের মতো দেখায়। এই পোশাক মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য ও সাম্যের প্রতীক, যেখানে ধনী-গরিব, জাতি-ধর্ম, ভাষা বা রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের কোন ভেদাভেদ থাকে না। নারীরা ঢিলেঢালা যে কোন পোশাকে অংশ নেন, যেখানে শুধু মুখ ও হাত খোলা রাখার বিধান রয়েছে।


মঙ্গলবার বিকাল থেকেই মিনায় হাজিদের আগমন শুরু হয়। বাস থেকে নামার সময় হজকর্মীরা তাদের হাতে তুলে দেন কফি ও খেজুর। এবারই প্রথমবারের মতো হজ পালনকারী ৩৫ বছর বয়সী সৌদি নাগরিক রীম আল-শোগরে বলেন, ‘খুবই আনন্দিত, এটা সত্যিই এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি।’


প্রাণঘাতী গরমের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে তাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে, এবার কাজ করছে ৪০টিরও বেশি সরকারি সংস্থা এবং আড়াই লাখ কর্মকর্তা।সৌদি হজমন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া জানান, এবারে ছায়াযুক্ত জায়গা ৫০ হাজার বর্গমিটার (১২ একর) বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৪০০ টির বেশি শীতলীকরণ ইউনিট এবং দ্রুত চিকিৎসা সহায়তার জন্য অতিরিক্ত হাজার হাজার মেডিকেল কর্মী মোতায়েন থাকবে। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে এবার হজ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হয়েছে ড্রোন ক্যামেরা ও বিশাল তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থা। বিশাল জনসমাগমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এ প্রযুক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।


মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন অনিবন্ধিত হাজি। তাদের জন্য পর্যাপ্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু বা বাসের ব্যবস্থা ছিল না। এবার অনিবন্ধিত হাজীদের ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। চলছে টেক্সট মেসেজ সতর্কতা, ড্রোন নজরদারি এবং নিয়মিত অভিযান।


নির্ধারিত কোটার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশ হজে অংশ নেওয়ার জন্য অনুমতি পায়, লটারির মাধ্যমে এই কোটার আওতায় হজযাত্রীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই ব্যয়ের কারণে কিংবা অনুমতি না পাওয়ায় অবৈধভাবে হজে অংশ নিতে চান, যদিও ধরা পড়লে তাদের গ্রেফতার ও বহিষ্কারের শিকার হতে হয়।


বিশাল জনসমাগম হজের ইতিহাসে এর আগেও বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ২০১৫ সালে মিনায় ‘শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ’ কার্যক্রম চলাকালে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান প্রায় ২ হাজার ৩০০ জন হাজী, যা হজ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।


সূত্র: এএফপি


এসজেড