যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুদিনের স্বপ্ন অবশেষে বাস্তব হতে যাচ্ছে। শনিবার, তার ৭৯তম জন্মদিনে ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় ট্যাংক, হেলিকপ্টার ও হাজার হাজার সেনাসদস্যের বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ৪৫ মিলিয়ন ডলারের এই কুচকাওয়াজটি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করা হলেও সমালোচকরা বলছেন, এটি সেনাবাহিনীর চেয়ে ট্রাম্পকেই বেশি সামনে আনার প্রচেষ্টা। ট্রাম্প সবসময়ই সামরিক প্রদর্শনীতে মুগ্ধ। প্রেসিডেন্টের প্রথম মেয়াদ থেকে তিনি প্যারিস, মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের সামরিক কুচকাওয়াজ দেখে অনুপ্রাণিত হন।
সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শনিবার ‘নো কিংস’ শিরোনামে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। এসব বিক্ষোভের মূল বক্তব্য—যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজতন্ত্র নয়। তবে ট্রাম্প এসব সমালোচনায় পাত্তা দিচ্ছেন না। মঙ্গলবার ফোর্ট ব্র্যাগ ঘাঁটিতে এক সফরে তিনি বলেন, ‘আমরা একটু শো অফ করতে চাই’। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি দেন, বিক্ষোভ বাধা দিতে চাইলে ‘প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ’ করা হবে।
‘জন্মদিনের বড় উৎসব’
ট্রাম্পের পরিকল্পিত কুচকাওয়াজটি ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের পর ওয়াশিংটনে সবচেয়ে বড় সামরিক প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে। এর আগে এমন প্রদর্শনী হয় ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের অভিষেক উপলক্ষে।
প্রায় ৭ হাজার সেনা হোয়াইট হাউস, ওয়াশিংটন মনুমেন্ট ও লিঙ্কন মেমোরিয়ালের পাশ দিয়ে মার্চ করবে। অ্যাপাচি গানশিপ, চিনুক ও ব্ল্যাক হকসহ ৫০টির বেশি হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর দেবে। রাস্তায় চলবে ১৫০টি সামরিক যান—এর মধ্যে ২৮টি এম১এ১ আব্রামস ট্যাংক, ২৮টি ব্রাডলি ও ২৮টি স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান রয়েছে।
প্যারেড শেষে সেনাবাহিনীর ‘গোল্ডেন নাইটস’ প্যারাশুট দল একটি মার্কিন পতাকা নিয়ে নামবে এবং ট্রাম্পকে উপহার হিসেবে প্রদান করবে। সার্বিক প্রস্তুতির দায়িত্বে থাকা কর্নেল কামিল স্জটালকপার বলেন, ‘আশা করছি মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করবে। ২৫০ বছরের জন্মদিনে কে না উৎসব চায়?’
‘গণতন্ত্রে বিশ্বাস’
তবে এই সামরিক প্রদর্শনী অনেকের কাছে ট্রাম্পের স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগে আগের চেয়ে আরও আগ্রাসী ভূমিকা নিচ্ছেন। ২০১৭ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প এমন আয়োজনের স্বপ্ন দেখেন। তবে সেবার খরচ (প্রায় ৯২ মিলিয়ন ডলার) ও রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় তা বাতিল হয়। এবার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাস্তাগুলো রক্ষায় ধাতব প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশ্লেষক পিটার লজে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন ব্যবসায়ী ও কৃষক, যারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়েছেন। সেই ঐতিহ্য থেকেই আমরা স্বৈরতান্ত্রিক সামরিক প্রদর্শনী এড়িয়ে চলি।’ তবে এমন প্রদর্শনীর পেছনে ট্রাম্পের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, এটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে। ইরানের পারমাণবিক আলোচনায় অনিশ্চয়তা ও ইসরাইলের হামলার হুমকি বিশ্ব রাজনীতিকে আবার অস্থির করে তুলেছে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড