ইসরায়েল ও ইরান টানা চতুর্থ দিনের মতো একে অপরকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আঘাত করলেও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কিছুটা কমে যাওয়ায় সোমবার বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি হয়েছে। পাশাপাশি তেলের দামেও পতন হয়েছে। নিউ ইয়র্ক থেকে এএফপি জানিয়েছে, ইউরো ও পাউন্ডের বিপরীতে ডলারের দাম কমেছে। এছাড়া নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত সোনার দামেও সামান্য পতন ঘটেছে।
আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ট্রেড নেশনের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক ডেভিড মরিসন বলেন, ‘বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা সপ্তাহান্তে যে আতঙ্কে ছিলেন, তা কিছুটা কেটে গেছে। ইসরায়েল-ইরানের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এই আশঙ্কা এখন কম। ইসরায়েলি বিমান হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণগুলো ইরানের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি অবকাঠামো এড়িয়ে গেছে এবং ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলাও এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্ষতি করেনি।’
ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান শেয়ার সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সার্বিকভাবে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে এবং দিনজুড়ে ইতিবাচক অবস্থানে ছিল। ইউরোপে লন্ডন, প্যারিস এবং ফ্র্যাঙ্কফুর্টের সূচকগুলোও দিন শেষে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এশিয়ায় টোকিও সূচক ১.৩ শতাংশ বেড়েছে, ইয়েন দুর্বল হওয়ায় এটি সহায়ক ছিল। হংকং ও সাংহাই সূচকও বাড়ে।
শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলা, ইরানের শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের হত্যা এক পর্যায়ে আঞ্চলিক সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
আইজি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের প্রধান বাজার বিশ্লেষক ক্রিস বুশাম্প বলেন, এখন সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমে যাওয়ায় সোমবার তেলের দাম হ্রাস পেয়েছে। যদিও দু'পক্ষের মধ্যে টানা ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময় দেখা যাচ্ছে। তবে যদি হরমুজ প্রণালীতে পরিস্থিতি শান্ত থাকে, তাহলে শুক্রবারের দামের ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখা কঠিন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, যে জুলাই মাসে সৌদি আরব এবং রাশিয়ার নেতৃত্বে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর ওপেক প্লাস জোট উৎপাদন আবার বাড়ানোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তও ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরব ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ওপেক+ জোট জুলাই থেকে আবারও উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা তেলের দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
এক্সটিবি ট্রেডিং গ্রুপের গবেষণা পরিচালক ক্যাথলিন ব্রুকস বলেন, তেল ও সোনার দামে আবার বড় উর্ধ্বগতি দেখতে হলে সংঘাতে উল্লেখযোগ্য রকমের নতুন উত্তেজনা লাগতে পারে। এই সপ্তাহে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ, ইংল্যান্ডের ব্যাংক এবং জাপানের ব্যাংক তাদের আর্থিক নীতির সিদ্ধান্ত নেবে। যেখানে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সম্ভাবনা প্রবল।
তবে ভবিষ্যৎ সুদের হার নিয়ে ইঙ্গিত পেতে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিবৃতির দিকেই নজর রাখবেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সুদের হার কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ দিয়ে আসছেন।
এছাড়াও রোববার থেকে কানাডায় শুরু হওয়া জি৭ সম্মেনে এ মধ্যপ্রাচ্যের সংকট এবং ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্পোরেট সংবাদে, শুক্রবার ট্রাম্প ইউএস স্টিলের সাথে ১৪.৯ বিলিয়ন ডলারের একীভূতকরণের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পর টোকিওতে নিপ্পন স্টিলের শেয়ার তিন শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই আলোচনার অবসান ঘটিয়েছে। ইউএস স্টিল-এর শেয়ার ৫.১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
ফ্রান্সে, কেরিং গুচ্চির মালিকাধীন কোম্পানি’র শেয়ার প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। কারণ, ফরাসি গাড়ি নির্মাতা রেনল্টের বিদায়ী সিইও কেরিংয়ের নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বলে গুজব ছড়ায়। পরে বাজার বন্ধের পর কেরিং এই নিয়োগ ঘোষণা করে। রোববার রেনল্ট জানিয়েছে যে লুকা ডে মেও জুলাইয়ে পদত্যাগ করবেন, যার ফলে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৮.৭ শতাংশ কমে গেছে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড